রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৯:৩৮:৪০

পাচার হচ্ছে ইলিশ-রসুন, বিপরীতে দেশে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ-চিনি!

 পাচার হচ্ছে ইলিশ-রসুন, বিপরীতে দেশে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ-চিনি!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের ঘটনা বেড়েছে। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়। সে সুযোগেই এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ পাচার হচ্ছে বলে খবর মিলেছে।

একই সঙ্গে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে রসুন। এর বিপরীতে পাচার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ ও চিনি। তবে বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে তারা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছেন।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সীমান্ত এলাকা বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া গ্রাম থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ১৯ লাখ ভারতীয় রুপিসহ হৃদয় মিয়া নামে এক তরুণকে আটক করে বিজিবি।

গতকাল শুক্রবার তাঁকে দোয়ারাবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রসুন পাচারের টাকা নিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে ফেরার সময় হৃদয়কে আটক করে বিজিবি। হৃদয় বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভাওয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অন্তত ৮০০ বস্তা রসুন নিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে দেশীয় রসুন এখন প্রতি কেজি ২০০ টাকা। চায়না রসুন বিক্রি হয় ২০৪ টাকা কেজিতে। কোনোভাবে এসব রসুন ভারতীয় সীমানার ডালিয়া-কাসিন্দা নিয়ে গেলেই কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। এ জন্যই রসুন পাচার বাড়ছে।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, চট্টগ্রাম, সিলেট, ছাতক হয়ে সীমান্তের বাংলাবাজার পর্যন্ত পিকআপ বা ট্রাকে আসছে চায়না রসুন। পাচারকারীরা এসব রসুন বাংলাবাজার থেকে অটোরিকশায় করে মৌলারপাড় পৌঁছায়। এ ছাড়া পাচারের আরেকটি রুট বাংলাবাজার থেকে বোগলা। এর পর চিলাই নদীর রাবারড্যাম হয়ে অটোরিকশায় পুরোনো বাঁশতলা। শেষে চৌধুরীপাড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে মৌলারপাড় নিয়ে পাচারের মালপত্র জমা করা হয়।

সূত্র বলছে, মৌলারপাড় এলাকা রীতিমতো চোরাচালানের বন্দর হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ শ্রমিক এপার থেকে রসুন, ইলিশ, শিং, শুকনো সুপারি বহন করে পাচারকারীদের সহায়তা করছে। বিনিময়ে ওপার থেকে আসছে চিনি-পেঁয়াজ। এসব মালপত্র বহনকারী শ্রমিকদের কাছে দাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র থাকে সবসময়।

অপরিচিত কাউকে দেখলেই মারমুখী হয়ে ওঠে তারা। শ্রমিকদের সর্দারদের কাছে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রও। মাঝে মাঝে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্কও সৃষ্টি করে তারা। ভারতের কাসিন্দা ও ডালিয়া বস্তিতে রসুনের বস্তা পৌঁছে দিচ্ছে এসব শ্রমিক। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ১২৩৪ থেকে ১২৩৬ পিলারের অংশটুকু ছেঁড়া থাকায় সেদিক দিয়ে মালপত্র ঢোকানো হচ্ছে। তা ছাড়া সীমান্ত সড়কের কালভার্টের ভেতর দিয়েও একটু কষ্ট করলেই ভারতে ঢোকা যাচ্ছে মালপত্র নিয়ে।

এদিকে জেলার বিশ্বম্ভরপুর সীমান্তের রাজাপাড়া দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় চিনি ও পেঁয়াজ। এই পথেও রসুন পাচার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য ছবদর আলী (ছদ্মনাম) জানান, গত সোমবার তিনি নিজেই দেখেছেন, পিকআপে করে সীমান্তপথে রসুন নিয়ে যেতে। গত সরকারের সময় এই সীমান্তে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করত একটি পক্ষ। আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন আরেক পক্ষ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগে মৌলারপাড় চোরাচালান ঘাটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন স্থানীয় রামসাইরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও লিডিং ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজালাল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন এই ঘাটে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আজিজ সুমন ও তাঁর লোকজনের প্রভাব বেশি বলে এলাকায় প্রচার আছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল আজিজ সুমন বলেন, আমার ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়। দল টানতে টানতে আমি বেহুঁশ। এসব খারাপ কাজ দেখভালের সময় নেই আমার।

সার্বিক বিষয়ে বিজিবির দোয়ারাবাজার সীমান্তের বাংলাবাজার বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবুল বাশার আজাদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে রসুন, সুপারি, শিং, ইলিশসহ নানা পণ্য অবৈধভাবে ভারতে পাঠায় একটি চক্র। গত বৃহস্পতিবার রাতে আটক হৃদয় মিয়া চোরাচালানে জড়িত। তাঁর কাছ থেকে সাড়ে ১৯ লাখ রুপি উদ্ধার করা হয়েছে।

হৃদয় স্বীকার করেছেন, পণ্য পাচারের অর্থ নিয়েই তিনি দেশে এসেছেন। তবে তাঁর পেছনে একটি চোরাচালান চক্র জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে।

দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান বলেন, রুপিসহ আটক হৃদয় মিয়াকে শুক্রবার বিকেলে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হবে।

এদিকে সিলেট নগরীর পাইকারি বাজার কালীঘাট থেকে ভারত থেকে আসা চিনিবোঝাই একটি ট্রাক আটক করেছে পুলিশ। ট্রাকটির ওপরে বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল চিনির বস্তা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালীঘাটস্থ শাহ চট্ট রোডের বাণিজ্য ভবনের সামনে থেকে ট্রাকটি আটক করা হয়। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি থেকে ৮৫ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে