এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীতে খুচরায় এখন একটি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। এক ডজন নিলে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। বিক্রেতারা দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহে ঘাটতির কথা বললেও অনুসন্ধানে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডিম দু-এক দিন মজুদ করে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু চক্র।
এমন মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক দাবি করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই ডিমের দাম বাড়ছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিলেও ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা। খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ডজনে ২২ থেকে ২৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারগুলোতে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন ডিম এখন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা।
হালি ৬০ টাকা। অথচ ডিম উৎপাদক খামারিরা পাইকারদের কাছে এসব ডিম বিক্রি করছেন ১১ টাকা ৬০ পয়সা বা প্রতি ডজন ১৩৯ টাকা দরে। অভিযোগ রয়েছে, তেজগাঁও থেকে রাজধানীর ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়। দাম বেঁধে দেওয়া হয় এসএমএসের মাধ্যমে।
ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তেজগাঁও ডিমের আড়ত মালিক সমিতির কারসাজিকে দায়ী করেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। ডিম ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠন তেজগাঁও ডিমের আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্যায় কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকায় খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে ডিমের সরবরাহ কমে গেছে। এতে চাহিদা ও সরবরাহে দৈনিক বড় একটি ঘাটতি থাকছে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে ডিমের চাহিদাও বেড়েছে। তবে ধীরে ধীরে কমে আসবে দাম।
গত বুধবার মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে উঠে আসে পাইকারি বিক্রেতাদের ডিম বিক্রির নানা অনিয়ম। খামারিদের কাছ থেকে কম দামে ডিম কিনলেও পাকা রসিদ রাখেন না তাঁরা। এতে বোঝা যায় কারসাজির বড় অংশে এই পাইকারি বিক্রেতারা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পাকা রসিদ রাখতে বলা হলেও তাঁরা কথা শুনছেন না। যে যুক্তি দিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না, তাঁদের মুনাফার হিসাব দেখলে সেটি টেকে না।’
জানতে চাইলে দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে ডিমের চাহিদা আছে দৈনিক চার কোটি পিস, উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে চার কোটি। কিন্তু বন্যা ও প্রচণ্ড গরমের কারণে এখন ২০ থেকে ৩০ লাখ ডিম কম উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ২৯ পয়সা, কিন্তু ভারতে ডিমের উৎপাদন খরচ মাত্র পাঁচ টাকা। এখানে উৎপাদন খরচকেই বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এটা সমাধান করতে হলে বড় বড় সিন্ডিকেট ও করপোরেট গ্রুপগুলোকে ধরতে হবে।’
রাজধানীর বাড্ডার ভ্যানচালক মো. রফিক বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের বাড়তি দামের কারণে মাছ-মাংস ঠিকমতো খাওয়া হয় না। ভরসা ছিল ডিম। সেই ডিমের দামও এখন নাগালের বাইরে।’
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, অসাধু মজুদদারদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে দাম বেঁধে দিয়ে কখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। প্রাণিসম্পদ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর শুধু দাম নির্ধারণ করে বাজার তদারক না করলে বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠবে।
পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে
পেঁয়াজ ও আলু আমদানিতে সরকার শুল্ক কমানোর পর ভারতও পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের পেঁয়াজ ১১৫ টাকা এবং অন্যান্য পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে আলু আগের বাড়তি দাম ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।