রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৭:৫৭:৩৭

আমদানির পর ঢাকার খিলক্ষেত বাজারে আলুর কেজি কত হলো জানেন?

আমদানির পর ঢাকার খিলক্ষেত বাজারে আলুর কেজি কত হলো জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাজারে গিয়ে সবজি-মুরগির বাড়তি দর শুনে আলু কিনেই বাজার শেষ করতে হয়েছে বেসরকারি কোম্পানির এক চাকরিজীবীকে। ঢাকার খিলক্ষেত বাজারে শুক্রবার আলু বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা কেজি দরে। ঢাকার খিলক্ষেত কাঁচা বাজারে মাঝবয়সি এক ব্যক্তি আলু কিনছিলেন, পাঁচ কেজি নিলেন ২৭০ টাকায়।

কাছে গিয়ে কথা হলে একপর্যায়ে নাম বললেন। মঞ্জুর হোসেন নামে এই ব্যক্তি প্রতি কেজি আলু কিনেছেন ৫৪ টাকা করে। ভেবেছিলেন, ভারত থেকে আলু আমদানি হওয়ায় বাজারে দাম কমই পাবেন; অন্তত ৫০ টাকার নিচে নামবে। কিন্তু তা হয়নি।

আলু কেনার পর একই বাজারে আরও কয়েকটি সবজির দোকান ঘুরতে দেখা গেল তাকে। দুটি দোকানে দামাদামিও করেন, তবে কিছু কিনলেন না।

আবার কথা হলে তিনি বলেন, মেয়ের পছন্দের কিছু সবজি কেনার ইচ্ছা ছিল; তা আর হল না। মাছ-মাংসের বাজারে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।

বাসা ভাড়া, মেয়ের পড়াশোনা ও পরিবারের খাবার, ওষুধসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে মাসের শেষ দিকে এলে মঞ্জুর হোসেনের পকেটে টান পড়ে যায়। বলছিলেন, এর মধ্যে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানো এবং ওষুধ কেনার খরচ যোগ হয়েছে নতুন করে।

পকেটে টান থাকায় ইচ্ছা থাকলেও বাজারের তালিকা কাটছাঁট করতে হচ্ছে; তাতেও এদিক-সেদিক করে মাসের শেষ কয়েকটি দিন পার করতে হবে, বলছিলেন মঞ্জুর হোসেন।

খিলক্ষেতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন মঞ্জুর, বেতন ত্রিশ হাজার টাকার মত। তার এই আয়েই তিনজনের পরিবারের সব খরচ চালাতে হয়। গ্রামেও রয়েছে স্বজন, তাদেরকেও দেখতে হয়। সব মিলিয়ে কয়েক জায়গায় দেনায় পড়ে গেছেন তিনি।

শুক্রবার স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মঞ্জুর হোসেন। তখন বাজারে গিয়ে সবজি-মুরগির বাড়তি দর শুনে আলু কিনেই বাজার শেষ করতে হয়েছে তাকে।

কথা হলে তিনি বলেন, “আমাদের মত ঢাকায় পা দেওয়া কোনো মানুষ কি টানাটানির বাইরে? সবাই তো আর্থিক দূরবস্থায় আছি। তারপরও বাজার খরচ বেড়েই চলেছে। আমাদের বাজারের হিসাব মেলে না।

“আলুর কেজি যদি ৩০ টাকা হয়, এ রকম সব কিছুর দাম যদি কমে আসে, তাহলে আমাদের যে আয় সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে বাঁচতে পারতাম।”

খিলক্ষেত বাজারে ফরিদপুরের পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১১০ টাকা, রসুন ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা ও আদা ২৪০ টাকা।

বিক্রেতা মো. সাগর বলেন, ভারতের পেঁয়াজ আসে, আবার বন্ধ থাকে। এসব কারণে দামটা স্বাভাবিকভাবে কমে না। মাল আনা চলমান রাখতে হবে।

এই বাজার সব সময়ই মনিটরিং করা হয় জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তারা সিভিল ড্রেসে এসে বাজার দেখে, মনিটরিং হয় অনেক। তাই যেমন খুশি তেমন দামে বিক্রি করা যায় না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খিলক্ষেত বাজারের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে মহাখালী বাজারে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১৫ টাকা ও আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মহাখালী বাজারের বিক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, “ভারতেরগুলোর দাম কম। সেগুলো আনি নাই। এগুলোর দাম বেশিই।”

মানিক মিয়া আলু-পেঁয়াজ আনেন কারওয়ান বাজার থেকে। সেখানে পাইকারিতে দাম দেখা যায় ১০০-১০৫ টাকার মধ্যে। সেই হিসাবে মানিক মিয়া প্রতি কেজিতে লাভ করেন ১০ টাকার ওপরে। আর আলুর কেজি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। সেই হিসেবে মানিক মিয়া লাভ করছেন ১২ টাকার মত।

সপ্তাহের ব্যবধানে সবজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। খিলক্ষেত বাজার ও মহাখালী বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা কেজিতে, ঢেঁড়স, পটল ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি কেজি। বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, করলা ৮০ ও দেশি শসা ৮০ টাকা প্রতি কেজি; আর লাউ প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে শিম গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে, এখন তা উঠে গেছে ২৮০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।

তবে এর চেয়ে কিছুটা কম দাম দেখা গেছে ঢাকার অদূরে টঙ্গীর নতুন বাজার কাঁচাবাজারে ও গাজীবাড়ি কাঁচাবাজারে। এখানে আপশাপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরাসরি সবজি আসে।

মহাখালী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. ফয়েজ বলেন, সব সবজিতেই ১০-২০ টাকার মত দাম বাড়ছে। বৃষ্টির কারণে অনেক ধরনের সবজি গাছের গোড়া মরে গেছে। তাই দাম বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে। বাজারে কাঁচা মরিচ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

খিলক্ষেত বাজারের সবজি বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে মরিচ আনি। সেখানে আজ (শুক্রবার) বাজার গেছে ৯০০ টাকার ওপরে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি)। আমাদের পরিবহন খরচ আছে, লেবার বিল আছে; তাই দাম একটু বেশিতেই বিক্রি করতে হয়।

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, বাজারে সবজি কম আসায় সব সবজিতেই গত চার-পাঁচ দিনের চেয়ে শুক্রবার কেজিপ্রতি ১০ টাকা করে বাড়ছে।

টঙ্গীর নতুনবাজার কাঁচাবাজারে মো. ইয়াসিন মিয়া নামে একজন ক্রেতা বলেন, “আগে শুনতাম, পরিবহনে চাঁদাবাজির জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। কিন্তু এখন তো কোনো চাঁদাবাজি নাই, তারপরও দাম কমে না কেন?”

তিনি মনে করেন, পরিবহনে চাঁদাবাজি না থাকলেও কোনো এক জায়গায় সিন্ডিকেট রয়ে গেছে, ফলে তরিতরকারি দাম কমছে না।

টঙ্গীর গাজীবাড়ি কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. কালাম মিয়া বলেন, “পাইকারি বাজারে তরিতরকারির ক্রাইসিস আছে। তাই দাম কমছে না। বাজারে শিম ও ফুলকপির মতন নতুন সবজি আসলেও দাম অনেক চড়া। শীতকালীন তরকারি না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।”

খিলক্ষেত কাঁচা বাজারের খিলক্ষেত চিকেন হাউজে ব্রয়লার মুরগির যে মূল্য তালিকা ঝুলছিল, তাতে দেখা যায় প্রতি কেজির দাম ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০ টাকা। তবে বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের দাবি এই দাম দুই দিন আগের।

তিনি বলেন, দুই দিন আগে ২০০ হইছিল। এখন ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা হইছে। এর আগে গত শুক্রবারেও ১৮০ ছিল। আর সোনালি ২৭০ টাকা।

তবে ব্রয়লার মুরগির দর কম দেখা গেছে কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচা বাজার, টঙ্গীর নতুন বাজার কাঁচাবাজার ও টঙ্গীর গাজীবাড়ি কাঁচা বাজারে। সেখানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়।

খিলক্ষেত বাজারে অন্য সব বাজারের তুলনায় ৫০ টাকা কমে গরুর মাংস মিলেছে শুক্রবার। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা। আর কারওয়ান বাজার বা মহাখালী বাজারে কিনতে হয় ৭৫০ টাকায়। খাসির মাংস সব জায়গায় ১১৫০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে লাল ডিম ৫৫ টাকা হালি, সাদা ডিম ৫২ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন লাল ডিম নিলে ১৬০ টাকা ও সাদা ডিমের ডজন ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে