এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : অভিযান, সভা, আমদানি শুল্ক হ্রাস ও আমদানিসহ নানা নাটকীয়তার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে। তবে ফের বাড়তে শুরু করেছে মুরগির দাম।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার, কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
মাস দুয়েক ধরেই লাগামহীন দেশের ডিমের বাজার। বাড়তে বাড়তে খুচরা পর্যায়ে প্রতিডজন ডিমের দাম ছুঁয়েছিল ১৮০-১৯০ টাকা পর্যন্ত। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের বাজার মনিটরিং, বিভিন্ন বাজারে ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক, ভারত থেকে ডিম আমদানি ও সবশেষ ডিম আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এতে বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। তবে এখনও সেটি বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের বেশিতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদক পর্যায় থেকে কম দামে ডিম কিনতে পারলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রায়হান বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদক পর্যায়েই এর দাম বেশি। এতে পাইকার হয়ে ভোক্তার হাতে যেতেই এর দাম বেড়ে যায়।
বর্তমানে প্রতি ডজন ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পাইকারিতে প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকা ও হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই দাম আরও কমে আসবে।
গত ১৭ অক্টোবর মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ভবনে ডিম, ব্রয়লার মুরগি, আলু ও পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার বিষয়ক একটি মতবিনিময় সভা হয়। এতে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ জানান, তেজগাঁও আড়তে দৈনিক ডিমের চাহিদা ২০-২৫ লাখ পিস। বিপরীতে করপোরেট কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ১০ লাখ ডিম। বাড়তি ডিম বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
তবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত সরবরাহ করলে শুক্রবার সকাল থেকে খুচরা পর্যায়ে ৪৮ টাকা হালি ডিম বিক্রি করা সম্ভব হবে। আর প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করা যাবে ১৫০ টাকায়। সে অনুযায়ীই পাইকারি পর্যায়ে দাম রাখা হবে।
দাম কমতে শুরু করলেও যেন হাসি নেই ক্রেতার মুখে। কেননা এখনও প্রতি ডজন ডিমে গুনতে হচ্ছে দেড়শ টাকার বেশি। তারা বলছেন, প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পণ্যটিও এখন নাগালের বাইরে; আমিষের তো কথাই নেই।
মোজাফ্ফর নামে এক ক্রেতা জানান, বাজারে মাছ-মুরগির দাম আগে থেকে লাগামহীন। এতে আমিষের চাহিদা মেটানো বিলাসিতা। এখন ডিমের দামও চড়া। এতে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা ফারুক বলেন, বাজারে এখন ডিম ও মুরগির দাম অনেক চড়া। অভিযানেও কাজ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট অনেক শক্ত। কঠোর আইন প্রয়োগ না হলে -- এ সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে না।
ডিমের বাজারের যখন এ পরিস্থিতি, তখন ঊর্ধ্বমুখী মুরগির বাজারও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। আর সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে কমেছে মুরগির সরবরাহ। তাছাড়া, মুরগির ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়ায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদনব্যবস্থা, যার প্রভাব পড়ছে বাজারেও। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী রিপন জানান, বাজারে মুরগি কম আসছে। পাশাপাশি পাইকারিতে দাম বাড়ায়, এর প্রভাবপড়ছে খুচরা বাজারেও । তবে বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।