রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:০৪:৪২

জানেন, কার লাভ কার ক্ষতি ডলারের দাম বাড়লে বা কমলে?

জানেন, কার লাভ কার ক্ষতি ডলারের দাম বাড়লে বা কমলে?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বাড়ছে। বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে নানা প্রভাব ফেলে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশের আমদানি খাত থেকে শুরু করে রপ্তানি খাত, ভোক্তা ব্যয় এবং মূল্যস্ফীতি পর্যন্ত একাধিক খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কিছু ক্ষেত্রে লাভবান হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাবই বেশি চোখে পড়ে।

ডলারের দাম বাড়ার ফলে দেশীয় রপ্তানিকারকরা তুলনামূলকভাবে বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারে। বিদেশে পণ্য রপ্তানি করলে ডলারের মূল্যের ভিত্তিতে টাকা আসে, তাই ডলারের দাম বাড়লে পণ্য রপ্তানি করে পাওয়া টাকার পরিমাণও বাড়ে।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলো অর্থাৎ যারা তৈরি পোশাক শিল্প ও কৃষিপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তারা এতে সুবিধা পেতে পারে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও কিছুটা বাড়তে পারে।

তবে ডলারের দাম বাড়লে আমদানি করা পণ্যের খরচও বেড়ে যায়। বিশেষ করে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য এবং কাঁচামালের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ যেমন তেল, গ্যাস, কাঁচামাল এবং অন্যান্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের উপর নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানির খরচও বেড়ে যায়। এর ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় ও ব্যবসায়িক খরচও বেড়ে যায়।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ডলার প্রধানতম বৈশ্বিক মুদ্রা। যদিও মার্কিন ডলারের পাশাপাশি ইউরো জনপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই দুটির প্রচলন বেশি।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের অংশ ৬৪ শতাংশের বেশি। ইউরো প্রায় ২০ শতাংশ। ডলার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শক্তিকে প্রতিফলিত করে।

অপরিশোধিত তেলসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণ ডলারে অনুমোদিত হয়। বিশ্বের ১৮০ বা এর বেশি অন্যান্য মুদ্রার বেশিরভাগই নিজ নিজ দেশের মধ্যে ব্যবহৃত হয়।

আমরা প্রায়ই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলি। মনে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকলে এর দাম বেড়ে যায়। চাহিদা-সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান হয়। যখন অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ বেশি হয়, কিন্তু আমরা যা চাই তা পাই না, তখন ডলারের বিপরীতে মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।

যখন কোনো কিছুর চাহিদা বেশি থাকে, তখন এর দাম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি থাকায় ডলারের দামও বাড়ছে। যেসব দেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি, তারা রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি বাবদ বেশি খরচ করে। ডলারের দাম বেশি হলে সেসব দেশের আমদানি খরচ বাড়ে।

ডলারের দাম সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। ডলারের দাম বাড়ার আগে বা টাকার অবমূল্যায়নের আগে যে পরিমাণ উপার্জন করতেন এখনো তাই করছেন। তারা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন। কিন্তু, আসলে কী তাই?

বিষয়টি মোটেও এমন নয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি মানেই নিজস্ব মুদ্রার দাম কমে যাওয়া। এটি সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে। ডলারের দাম বেড়ে গেলে বেশি খরচে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়।

দাম কি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের জন্য জ্বালানি খরচ বাড়াচ্ছে? তা নয়। তেলের দাম বাড়লে শাকসবজি, ভোজ্য তেল ও খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। ফলে, সেসব পণ্যের দামও বাড়ে। এটি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। এটি একটি দেশকে মূল্যস্ফীতির দিকে ঠেলে দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়।

অপরিশোধিত তেলের জন্য অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয় বলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির সক্ষমতা কমতে থাকে। এ কারণে আমদানিনির্ভর দেশগুলোয় বিদেশি পণ্য ব্যয়বহুল হয়।

ডলারের দাম বৃদ্ধি বা টাকার দরপতন বিদেশি শিক্ষা ও ভ্রমণকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়।

আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, কেন ডলারের দাম বাড়ছে? ইউক্রেন যুদ্ধ ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং টাকা বা রুপির দর পতনের গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ। যুদ্ধের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় তেলের দামও বেড়েছে।

বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা যখন স্টক ও বন্ড বাজার থেকে অর্থ তুলে নেন তখনো বিভিন্ন মুদ্রার দরপতন হয় এবং ডলারের দাম বেড়ে যায়।

প্রশ্ন হলো—ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণ করে কে? বাংলাদেশ সরকার? যুক্তরাষ্ট্র? নাকি অন্য কেউ? আসলে কেউই করে না।

ডলারের দর বৃদ্ধি কারো কারো জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে। যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা অন্যান্য দেশে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীরা দেশে ডলার পাঠালে বিনিময় হারের কারণে তাদের পরিবার বেশি অর্থ পায়।

টাকার অবমূল্যায়ন রপ্তানিকারকদের ডলারের বিপরীতে আরও বেশি অর্থ পেতে সহায়তা করে। সহজ কথায় বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা আরও বাড়ায়। সূত্র : অর্থসূচক

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে