শনিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৪, ০২:২৭:১৩

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার কারণ জানালেন প্রেসসচিব

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার কারণ জানালেন প্রেসসচিব

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের প্রেসসচিব শফিকুল আলম। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার কারণ তুলে ধরেছেন তিনি। প্রেসসচিব বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রলীগ অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেছিল। এ জন্যই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিরাপদ বাংলাদেশ চাই' শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় নতুন করে রাষ্ট্র মেরামত করতে হলে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করত হবে বলেও জানান প্রেসসচিব।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে শফিকুল আলম বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ করতে হবে।

যাতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারে। ক‍্যাম্পাসগুলোকে কোনো ধরনের সন্ত্রাসের আখড়া করা যাবে না। নতুন বাংলাদেশ গড়তে যেন শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ক‍্যাম্পাসে থেকে উদ্ধুদ্ধ হয়।’ প্রেসসচিব আরো বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল ছাত্রলীগ।

ফ‍্যাসিবাদের বয়ান তৈরি করেছে ছাত্রলীগ। পুরো জাতিকে জিম্মি করে রেখেছিল তারা। চাকরির ক্ষেত্রেও বৈষম‍্য তৈরি করে রেখেছিল। সাধারণ ছেলে-মেয়েদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়। বাংলাদেশকে নিরাপদ করতে হলে শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করতে হবে।’

তিনি বলেন, 'এক মহৎ আন্দোলন ক্যাম্পাস থেকে শুরু হলো। এ রকম আন্দোলন এর আগে তেমন একটা হয়নি। এর যে ব্যাপ্তি তা ধারণার বাইরে। এ আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল ছাত্রলীগ। তারা ছিল ফ্যাসিবাদের মূল ফুট সোলজার। ছাত্রলীগ ফ্যাসিবাদের বয়ান তৈরি করেছে। অনেকে ছাত্রলীগ করত যে সে একটা চাকরি পাবে। গ্রামের যে ছেলেটা ছাত্রলীগ করে তার চাকরি হইছে। কিন্তু যে ছেলেটা পড়ুয়া ও জ্ঞানী তার চাকরি হয়নি। আর ছাত্রলীগের কর্মীদের চাকরি হয়েছে পুলিশে, চাকরি হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থায়।'

তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েরা পুরো জাতিকে জিম্মি করে রেখেছিল। যে আপনি ছাত্রলীগ করবেন তো আপনার জীবন সুন্দর হবে। আর অন্য কোনো কিছু করবেন তো আপনার জীবন সুন্দর হবে না। গ্রামে যারা বিসিএসের ইন্সপেকশনে গেছে, তাদেরকে ছাত্রলীগের ছেলেরাই বলছে এই ছেলেটার বাবা বিএনপি করে, ওকে চাকরি দিয়েন না। যে পুলিশ ইন্সপেকশনে যাচ্ছে তার তো জানার কথা না যে ছেলেটার পরিবারের কে কোন দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এটা কে দেখিয়ে দিয়েছে। ওই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা দেখিয়ে দিয়েছে। যাতে এই ছেলেটার চাকরি না হয়।'

প্রেসসচিব বলেন, ‘আমাদের সরকার বা আমরা চাই, প্রত্যেকটা শিক্ষাঙ্গন নিরাপদ হোক। বাংলাদেশের সব শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ রাখতে হবে। তাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা সুস্থভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। তারা যেন পৃথিবীর যেকোনো ছাত্রের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে পারে। এর জন্য একটা সৃজনশীল সিসুয়েশন আমাদের ক্যাম্পাসগুলোতে তৈরি করতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোতে যেন আর কোনো সন্ত্রসীগোষ্ঠী তৈরি না হয়, সে জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করি, সামনে সরকারে যারা আসবে তারাও কাজ করবে।'

নিরাপদ বাংলাদেশ চাই-এর মুখপাত্র রায়হান উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিউবিটি) সিএসই বিভাগের লেকচারার জহিরুল ইসলাম, একতারা বাংলাদেশের আহ্বায়ক প্লাবন তারিক। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, নিউ দিল্লির সাউথ এশিয়ান উইনিভার্সিটির পিএইচডি রিসার্চার শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। 

প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধ''র্ষণ ও যৌ'''ন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এতদসম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে।’

‘যেহেতু ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করিয়া শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছে এবং আরো অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করিয়াছে। যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত।’

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, “সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং ওই আইনের তফসিল-২-এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।”

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে