এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘আমরা এ দেশে জন্মেছি। এ দেশেই মরব। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। প্রয়োজনে আমরা ফখরুল সাহেবের ঠাঁকুরগাঁওয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠব।’— কথাগুলো বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে— কথায় উন্নয়নের ‘কলা ঝুলানো’ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী রাতের আঁধারে অবৈধ পথেই পাড়ি জমিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে।
তথ্য বলছে— শুক্রবার গভীর রাতে তার পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন চাউর হলেও, পুলিশ অবশ্য পরদিন শনিবার মধ্য রাতে তাকে ধরতে চট্টগ্রামের হালিশহরের শান্তিবাগে স্ত্রী ইশরাতুন্নেসার বড় ভাই নুরুল হুদার বাসায় অভিযান চালিয়েছে।
যেখানে পালিয়ে গিয়েও সুবিধান পাচ্ছেন না ওবায়দুল কাদের, খুঁজে বেরাচ্ছেন আ.লীগের ক্ষুদ্ধ নেতারা!
বিশেষ সূত্র থেকে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের ভারতে পালানোর জন্য শহীদ নূর হোসেন দিবসের পরদিন দলের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এমন পদক্ষেপ নেন। তবে এই পালানোর মাধ্যমে তিনি কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ ভারতে গিয়ে তাকে নিজেকে গোপন রাখতে হচ্ছে। এমনকি সেখানে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারাও তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। একদল ক্ষুব্ধ নেতার রোষ থেকে বাঁচতে তিনি ভারতে লুকিয়ে আছেন এবং তারা তাকে খুঁজে পেলে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা করছেন।
৫ আগস্টের পর, যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারতে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জানাচ্ছেন, ওবায়দুল কাদের কলকাতায় পৌঁছেছেন। যদিও তারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, তবে আশপাশের কিছু সূত্র বলছে, তিনি ভারতেই আছেন।
অন্যদিকে, নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের শেষ ভাগে ওবায়দুল কাদের সিলেট বা ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত পাড়ি দেন। পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে দেশ ছাড়তে না পারায়, সীমান্ত এলাকাতেই কিছু সময় কাটান। তারপর ভারতের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে কলকাতা পৌঁছান। স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা তার সাথে যাননি।
ভারত যাওয়ার আগে, আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে কাদের গুলশান থেকে যশোর চলে যান। সেখান থেকে তিনি একজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন, যাতে কোনো সময় ভারতে চলে যেতে পারেন। গুলশানে এক বাড়িতে পূর্বেই আত্মগোপন করেছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, যিনি পরে ভারতীয় সীমান্তে মারা যান।
এদিকে, ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ অবস্থান জানতে তার মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপও বন্ধ ছিল। আওয়ামী লীগে তার বিরুদ্ধে বিরোধিতাকারী নেতারা জানিয়েছেন, তারা একবাক্যে নিশ্চিত যে কাদের কলকাতায় আছেন এবং সেখানে নিজেকে গোপন রেখেছেন।
ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা কাদেরের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। এই নেতাদের অভিযোগ, কাদেরই সরকারের পতনের জন্য দায়ী। তারা বলছেন, যদি কাদেরের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে পরিস্থিতি বিব্রতকর হতে পারে।
ওবায়দুল কাদের সরকার পতনের সময় একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। বিশেষ করে, "ছাত্র-জনতার আন্দোলন মোকাবিলায় ছাত্রলীগই যথেষ্ট" বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার পর থেকেই তিনি দলের ভেতর কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন, কিন্তু এরপর তিনি একেবারেই গুটিয়ে যান। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজের পুরো দায়িত্ব চলে যায় দলের অন্য নেতাদের কাছে।
তিনি তার দলের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন। ফোন ধরতেন না, নেতাকর্মীদের কাছে দুর্ব্যবহার করতেন। এমনকি, বিএনপির উদ্দেশে ‘খেলা হবে’ বলার পর সেই খেলা এখন তার পেছনে ছুটছে, এবং তিনি নিজেই এখন ‘নিখোঁজ’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদেরের বিরুদ্ধে চলত নেতিবাচক ট্রল। দামি ঘড়ি, কোট-টাই ব্যবহার এবং অদ্ভুত কিছু মন্তব্যের জন্য তিনি বারবার হাস্যরসের পাত্র হয়েছেন। তবে তার "পালাব না" মন্ত্র এখন ফাঁক হওয়া এক মজার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তিনি নিজেই এখন পালিয়ে আছেন। ফেসবুকে সক্রিয় থাকার বদলে তিনি এখন সেখানে থেকেও উধাও। এটা একদিকে যেন তার নিজেরই দেওয়া কথার প্রতি প্রতিশোধ। "পালাব না, কোথায় পালাব?"—অথচ এখন তিনি পালিয়ে আছেন, নিজেই একটা রহস্য হয়ে গেছেন।