এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : একটি ই-পাসপোর্টের বুকলেট তৈরিতে লাগে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ। এসব উপকরণের কাঁচামাল জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির মাধ্যমে গ্রিস থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। পরে চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ অ্যাসেম্বল বা সংযোজন করা হয় দেশে। বাকিটা গ্রিস থেকেই সংযোজন করে আনা হয়।
‘পাসপোর্ট পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্স-২, উত্তরায় বহুতল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন করে দেশেই পাসপোর্টের বুকলেট শতভাগ সংযোজন করতে চায় বাংলাদেশ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমদানির পরিবর্তে বুকলেট সংযোজন করে রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
পাসপোর্টের বুকলেট তৈরির উপকরণ
পাসপোর্টের বুকলেট তৈরির অন্যতম উপকরণ ইনার পেজ, ডাটা পেজ, পলি কার্বনেট চিপযুক্ত ডাটাবেজ, কাভার পেজ, ফয়েল পেপার, গাম, গোল্ডেন ফয়েল ও প্রত্যেক পাতার সিকিউরিটি মার্ক। এসব উপকরণ তৈরির কাঁচামাল আমদানি করা হয়। পরে সংযোজন করা হয় দেশে। বর্তমানে বছরে ৪২-৪৫ লাখ পাসপোর্টের চাহিদা রয়েছে। তবে কাঁচামাল আমদানি করে মাসে এক-দেড় লাখ পাসপোর্ট দেশে সংযোজন হচ্ছে। বাকি বুকলেট গ্রিস থেকে আমদানি করা হয়।
নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা প্রভৃতি কারণে মানুষের বিদেশে যাতায়াত বেড়েছে। ক্রমাগত বাড়ছে পাসপোর্টের চাহিদা। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশে বুকলেট শতভাগ সংযোজন করতে পারলে সাশ্রয় হবে সরকারের বিপুল অর্থ। নতুন কুগলার মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানো, কাঁচামাল সংরক্ষণ যন্ত্রপাতি স্থাপনে বিশেষায়িত ওয়্যার হাউজ, অ্যাসেম্বল লাইন স্থাপন, অডিটোরিয়াম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ‘পাসপোর্ট পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্স-২, উত্তরায় বহুতল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে এসব কাজ ।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা। চার বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. ফেরদৌস উর রহমান বলেন, ‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়াসহ নানা কারণে ই-পাসপোর্টের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া অনেকে এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্টে চলে যাচ্ছে। সে কারণে সামনে আরও চাহিদা বাড়বে। বর্তমানে দৈনিক ২২ থেকে ২৫ হাজার পাসপোর্ট দেশে অ্যাসেম্বল হচ্ছে, কিন্তু চাহিদা আরও বেশি। কিছু পাসপোর্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমরা নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারলে বিদেশ থেকে আর পাসপোর্টের বুকলেট আমদানি করা লাগবে না। শুধু কাঁচামাল আমদানি করে দেশের চাহিদা শতভাগ পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো।’
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নুরুস সালাম বলেন, ‘নানা কারণে ই-পাসপোর্টের চাহিদা দেশে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতিমাসে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ ই-পাসপোর্ট প্রয়োজন। বছরে প্রায় ৪২ থেকে ৪৮ লাখ ই-পাসপোর্ট এখন দরকার হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে এই চাহিদা আরও বাড়বে।’
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, ২০২০ সালে উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ই-পাসপোর্ট চালু করা হয়। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে ৭১টি পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। বিদেশের ৮০টি মিশনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ই-পাসপোর্ট চালু করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যাবলী তথা পাসপোর্ট মুদ্রণ, কুগলার মেশিন স্থাপন, কাঁচামাল সংরক্ষণ ও আনুষঙ্গিক কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য উত্তরার দিয়াবাড়িতে ই-পাসপোর্ট পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।
আমরা নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারলে বিদেশ থেকে আর পাসপোর্টের বুকলেট আমদানি করা লাগবে না। শুধু কাঁচামাল আমদানি করে দেশের চাহিদা শতভাগ পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো।- ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. ফেরদৌস উর রহমান
দুটি বেজমেন্টসহ ১০ তলা ভিত বিশিষ্ট ৩০ দশমিক ৭৮৩ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন ছয়তলা পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্স-২ ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে আলোচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। পাসপোর্ট পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্স-২ মোট ২০ কাঠা ভূমির ওপর নির্মাণ করা হবে। স্থাপত্য অধিদপ্তর প্রণীত নকশা অনুযায়ী ভবনের মোট আয়তন হবে ৮০ হাজার ১০ বর্গফুট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেজমেন্ট-১ এ ফ্লোরের আয়তন হবে ১০ হাজার ২৭৫ বর্গফুট। এখানে থাকবে ১৭টি কারপার্কিং, ড্রাইভার ওয়েটিং রুম, ওয়াটার রিজার্ভার এবং ফায়ার ট্যাংক। এছাড়া, বেজমেন্ট-২ হবে বেজমেন্ট-১ এর অনুরূপ। এখানে ১৯টি কারপার্কিং থাকবে। গ্রাউন্ড ফ্লোরের মোট এরিয়া হবে ৯ হাজার ৮৫০ বর্গফুট। এখানে থাকবে তিনটি ভিআইপি কারপার্কিং, রিসিপশন, ভিআইপি ওয়েটিং এরিয়া, লবি, সিকিউরিটি মনিটরিং রুম, ফায়ার রুম, ফায়ার ট্যাংক, তিনটি পুরুষ ওয়াশরুম, দুটি নারী ওয়াশরুম, শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য একটি ওয়াশরুম, জেনারেটর রুম, ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল রুম ও একটি চিলার ইউনিট।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার মোট আয়তন ১৯ হাজার ১৬০ বর্গফুট এবং এ দুটি ফ্লোর ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালের অনুরূপ হবে। প্রতি ফ্লোরে একটি করে বড় প্রিন্টিং কক্ষ, লেমিনেশন কক্ষ, ব্ল্যাংক পাসপোর্ট স্টোর কক্ষ, কিউসি কক্ষ, প্রক্রিয়াকরণ কক্ষ, সিকিউরিটি কক্ষ, চারটি অফিস কক্ষ, টেস্টল্যাব, স্টিকার মেশিন কক্ষ ও ওয়াশরুম থাকবে।
পঞ্চম তলার মোট আয়তন হবে ১০ হাজার ২০ বর্গফুট। এ ফ্লোরে তিন হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি কনফারেন্স হল, পিএরুমসহ চারটি অফিসকক্ষ, দুটি বড় অফিস কক্ষ ও ছয়টি সাধারণ অফিসকক্ষ, একটি বড় লবি, আপ্যায়ন কক্ষ ও ওয়াশরুম থাকবে। এসব অবকাঠামো শতভাগ নির্মাণ করা হলে পাসপোর্টের বুকলেট আর বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন হবে না।