এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে একটি সারবাহী জাহাজে সাতজনকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সাতজন এবং গুরুতর আহত একজনসহ তাদের সবার বাড়িই নড়াইলে। একজন বাদে সবার নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে থামানো অবস্থায় থাকা মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের আল বাখেরাহ নামক জাহাজ থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয। এছাড়া গুরুতর আহত একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সাতজনকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত একজনের নাম জানা যায়নি। আর আহত ব্যক্তির নাম জুয়েল। তাদের সবার বাড়ি নড়াইলে।
মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অপর জাহাজ মুগনি-৩ এর মাস্টার বাচ্চু মিয়া ও গ্রিজার মো. মাসুদ জানান, সার বহনকারী ‘আল বাখেরাহ’ রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে। এরই মধ্যে কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরাহ জাহাজে ফোন করে কাউকে পাননি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মুগনি জাহাজ থেকে যোগাযোগের জন্য বলেন। ওই সময় মুগনি জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় বাখেরাহ জাহাজটিকে দেখতে পায়। ওই সময় তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ নম্বরে কল দেন।
এদিকে ৯৯৯ এ কলের সূত্র ধরে চাঁদপুর থেকে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমানের উপস্থিতে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ জাহাজা থেকে প্রথমে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং তিনজনকে আহত অবস্থায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনিসুর রহমান বলেন, জুয়েল নামে আহত একজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গলা ও শ্বাসনালিও কাটা ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। আর উদ্ধার করে আনা সজিবুল ও মাজেদুলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাদের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, জাহাজে ডাকাতি করতে বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, আহত একজন হাতের ইশারায় জানিয়েছে তারা আটজন ছিলেন। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ডাকাতি কিংবা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। তদন্তের পরে জানা যাবে।
ডিসি বলেন, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সাথে নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ, এই রুটে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদারের নির্দেশ দিয়েছি।