এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫ আগস্টের মতো আবারও নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখনো ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। দেশ ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য তিনি সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন।
সোমবার বিকালে ঠাকুরগাঁও শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
বিকাল ৪টা ৩২ মিনিটে ছোট ভাই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনের হাত ধরে সভামঞ্চে ওঠেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি সবাইকে সালাম বিনিময় করে বলেন, তোমরা (আপনারা) কেমন আছেন! এ সময় দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উচ্ছ্বাসভরে বলেন- আমরা ভালোই আছি।
সময়ের দিকে খেয়াল রেখে এরপর মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি সত্যি সত্যিই পরিবর্তন চান? নাকি আবারো সেই আওয়ামী লীগের নৌকাতে ফিরে যেতে চান?
তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা না সূচক কথা বললে মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ আগস্টে সবাই মিলে যেভাবে রাস্তায় নামছিলেন তাহলে আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। ভাতের অধিকার এবং ন্যায়বিচার ও সামাজিক অধিকার পাওয়ার জন্য।
এ জনসভাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। সদর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা ও জেলার অন্য ৪ উপজেলা থেকে নানা বয়সের মানুষ অংশ নেন।
মির্জা ফখরুলকে দেখতে সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জনসভায় আসেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ সভার মঞ্চে উঠে পড়েন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা অনেক রক্ত দিয়েছি, অনেক কষ্ট করেছি এবং অনেক কষ্ট ভোগ করেছি। তাই আজকে আমাদের কাছে সবচেয়ে যেটা বড় প্রয়োজন আমরা শান্তিতে থাকতে চাই, আমরা শান্তিতে একটি নির্বাচন করতে চাই। সেই নির্বাচনে আমরা ভোট দিয়ে আমাদের যাকে পছন্দ তাকে নির্বাচিত করতে চাই।
তিনি আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে বলেন, এখন আর জেলে যেতে হবে না । আমরা এখন শান্তিতে আছি। এখন রাত হলে পুলিশ আমাদের বাড়িতে গিয়ে আক্রমণ করবে না। যেটা আমাদের গত ১৫ বছর ধরে থাকতে হয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম যুদ্ধ করে। বুকের রক্ত দিয়ে লাখ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছেন। হিন্দু-মুসলমান ভাইয়েরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলাম। আমরা সেটা ভুলি নাই। আমরা যে ভারতে গেলাম, উদ্বাস্তু হয়ে গেলাম, আমাদের দেশের বাড়িঘর লুট হয়ে গেছে। পাক হানাদার বাহিনীরা লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা স্বাধীন হলাম যুদ্ধ করে এবং একটি দেশ পেলাম।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের মনে আশা ছিল যে, শেখ মুজিবুর রহমান বড় নেতা। তিনি আমাদের পাকিস্তান থেকে এসে একটি সুন্দর দেশ দিবেন, শান্তির দেশ। যেখানে আমরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ভাই ভাইয়ের মতো বাস করব; কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা সেটা পাই নাই। ওই স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে গেছে এই দেশে হানাহানি কাটাকাটি খুন জখম হিংসা।
ফখরুল বলেন, এখন একটা দাবি উঠেছে যে আমরা একাই সব করে ফেলেছি, আর আমরা যে ১৫ বছর ধরে মাইর খেলাম, মামলা খেলাম গায়েবি মামলা হলো জেল-জুলুমের শিকার হলাম।
নেতাকর্মীর উদ্দেশে ফখরুল বলেন, শুধু আপনারাই হামলা হামলার শিকার হন নাই। একইসঙ্গে সদরের প্রায় সাত হাজার আসামি ১০০টির উপরে মামলা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ। সাতশ মানুষকে গুম করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই দেশটা কারো বাপের না। আমাদের রক্ত পানি করে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা সবাই জান দিয়ে পেয়েছি বাংলা। কারো দানে পাওয়া নয়। এই দেশটা আপনাদের, এই মাটি আপনাদের। এই মানুষগুলো আপনাদের। আপনাদেরই রক্ষা করতে হবে এ মাটি ও দেশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কারো ওপর প্রতিহিংসা চালাতে চাই না, কারো ওপর প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা সবাইকে নিয়ে ভালোবেসে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই লক্ষ্যে কাজ করি ।
সদ্য পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তুমি কি করছো, এখন ভারতে বসে তুমি ষড়যন্ত্র করছ’। বিভিন্ন দেশের বাঙালি মানুষকে বিভ্রান্ত করছ ভারতে বসে। শুধু তাই নয়, দুঃখজনকভাবে এ কথা বলতে চেষ্টা করছ- এ দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।
আজকের এ জনসভায় উপস্থিত দাদা ও দিদিরা বলেন তো- আপনাদের ওপর কি কোনো জুলুম নির্যাতন হচ্ছে। এখানে তো আমাদের মনোরঞ্জন দাদা রয়েছেন, দিদিরাও রয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সংস্কার শুরু হয়েছে; ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ৩১ দফা ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করাসহ জবাবদিহিতামূলক পার্লামেন্ট করা হবে। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম, অ্যাডভোকেট আব্দুল আলিম, সাবেক সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল্লাহ হক মাসুদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতানুল ফেরদৌস নমরাজ চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরীফ ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিন প্রমুখ।