এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য। পরবর্তী সময়ে নিজেরা বিকল্পধারা নামে দল করেন। সেই দল এক পর্যায়ে বিএনপি জোটের সঙ্গে যুক্তও হয়। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগমুহূর্তে আওয়ামী লীগ জোটে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। বিতর্কিত ‘রাতের ভোটে’ বিকল্পধারা থেকে তিনিসহ দুজন সংসদ সদস্য হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটে ভিড়তে না পারলেও ভোটে অংশ নেন। তবে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত হন।
৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর বেশ বেকায়দায় পড়েন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরী। সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর ছেলে মাহীকে বঙ্গভবনের গেটে লাঞ্ছিতও করে জনতা। অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের দিন তাকে বঙ্গভবনের গেট থেকেই ফিরে যেতে হয়।
গত কয়েক মাস ধরে তরুণ প্রজন্মের আলোচিত নেতা মাহী বি চৌধুরী নীরব ছিলেন। এবার মুখ খুলে অনেকটা ‘ইউটার্ন’ নিলেন তিনি। স্বীকার করলেন, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দলটির জন্য ছিল বড় ভুল।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বারিধারায় বিকল্পধারার নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন তিনি। সেখানে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ দলীয় আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা করে মহাজোটে যোগ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা জনগণের কাছে ভুল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দলীয় ভাবমূর্তি ও তার ব্যক্তিগত নেতৃত্বের প্রতি আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, পরিবর্তনপ্রত্যাশী তরুণ ও সংস্কারপন্থী নাগরিকরা আমাদের পদক্ষেপকে সুবিধাবাদী হিসেবে দেখেছেন। এর ফলে দলের জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হ্রাস পেয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিকল্পধারা এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে আর কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। এমনকি সরকারি বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো অনুষ্ঠানেও বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ছিল না।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে মাহী বলেন, ২০১৮ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে একতরফা বিজয়ের চেয়ে ২০২৪ সালের সম্ভাব্য পরাজয় আমাদের কাছে অনেক বেশি সম্মানজনক।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, বিকল্পধারার রাজনীতির প্রবক্তা অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর শেষ ৯ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী দল পুনর্গঠন করে স্বল্পতম সময়ের আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে বিকল্প জেনারেল-২ (দ্বিতীয় প্রজন্ম) যাত্রা শুরু করবে ইনশাল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ৯ দফা নির্দেশনা তুলে ধরেন।
৯ দফা নির্দেশনা হচ্ছে— প্রজন্ম পরিবর্তন (প্রতি ২০ বছর অন্তর গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারার দায়িত্ব হস্তান্তর), দলীয় কাঠামো (সিঙ্গেল ইউনিট পার্টি, সমন্বিত ও যৌথ নেতৃত্ব, কর্মসূচিভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলা), দর্শন, রাজপথে ন্যূনতম দৃশ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা, সকল পর্যায়ে এবং সকল ক্ষেত্রে বিকল্পধারার রাজনৈতিক ভাষা (অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিময় ও সন্মানজনক), অহিংস ও রক্তপাতহীন কর্মকাণ্ড পরিচালনা, নিজস্ব উপার্জিত অর্থে দল পরিচালনা, বিকল্পধারার বিশ্বাস সর্বময় ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডে কোনো প্রকার পেশিশক্তি অথবা ক্ষমতা প্রদর্শন বিকল্পধারায় নিষিদ্ধ, দলের যেকোনো পদ বা পর্যায়ের নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্যতার ভিত্তি গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্ধারণ, পারিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কোনো সুযোগ থাকতে পারবে না।