সাজু মিয়া লাল, গঙ্গাচড়া: দূর থেকে দেখে মনে হবে এটি ইউনিয়ন অথবা জাতীয় নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র। কিন্তু না এটি একটি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা নির্বাচন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ব্যালট পেপারে ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেতগাড়ী বাজারে ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুলে তিনটি পদে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকালে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ইউনিয়ন আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এই ভোট শুধু ওই ইউনিয়নের বিএনপির নেতাকর্মীরাই দিতে পেরেছেন। বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন। ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা জাতীয় নির্বাচনের মতো তফসিল ছিল এই কমিটি নির্বাচনে।
তফসিল মোতাবেক মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই হয়েছে। প্রার্থীরা প্রচারের সময় পেয়েছেন তিন দিন। প্রতীক পেয়ে পোস্টার লাগিয়ে ও মাইকিং করে প্রচার এবং গণসংযোগ করেন প্রার্থীরা। নির্বাচনের জন্য ছিলেন প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার, ছিল ভোটের বাক্স।
গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের জন্য ৪৫৯ জন ভোটার ছিলেন। এবারের নেতা নির্বাচনে সভাপতি পদে ৪ জন। সকালে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতি প্রার্থী দুজন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ভোটগণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান মাবু।
সভাপতি পদে বিজয়ী মাওলানা সহিদুল ইসলাম চেয়ার মার্কায় পেয়েছেন ৩৩২ ভোট ও নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী নজরুল ইসলাম আনারস মার্কায় পেয়েছেন ১১৪ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হাবিবুর রহমান মই মার্কায় পেয়েছেন ৩৬৩ ভোট ও নিকটতম শরিফুল ইসলাম ফুটবল মার্কায় ৮৫ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজয়ী নুরুল আমিন নাদিম মাছ মার্কায় পেয়েছেন ২৯০ ভোট। নিকটতম আহসান হাবীব তালা মার্কায় পেয়েছেন ১৫৬ ভোট। মোট ভোট পড়েছে ৪৫২টি।
ভোটার আয়েশা আক্তার (৩৫) বলেন, ‘আগে নেতারাই নেতা নির্বাচন করে দিতেন। কিন্তু এবার আমাদের নেতা আমরাই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করব। এ জন্য আমরা খুব খুশি।’
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান মাবু। তিনি বলেন, ‘অন্য নির্বাচনের মতো এখানেও সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ নায়ক তারেক রহমান বলেছেন স্বজনপ্রীতি করে কোনো কমিটি হবে না। তৃণমূলের নেতাকর্মী যাদের ভোট দেবেন তারাই নেতা হবেন। বিএনপি যে একটি গণতান্ত্রিক দল এটাই তার বড় প্রমাণ। এভাবেই গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে।’
নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত গোলাম রব্বানী রঞ্জু। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধক ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আইয়ুব আলী, প্রধান বক্তা ছিলেন রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার শাহাদাৎ, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আখেরুজ্জামান মিলন, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুদ্দিন লিজু, চাঁদ সরকার, মীর কাশেম মিঠু, নাজমুল ইসলাম হুদা, আতাউল মওলা, উপজেলা যুব দলের সদস্যসচিব শাহিন আলম সোনা, সেচ্ছাসেবক আহ্বায়ক আমিনুর ইসলাম রঞ্জু, উপজেলা ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুজ্জামান প্রমুখসহ উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।-কালের কণ্ঠ