বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:২৪:৩৪

এক লাফে যত কমলো রড সিমেন্টের দাম

এক লাফে যত কমলো রড সিমেন্টের দাম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশের বাজারে কমেছে নির্মাণ-সামগ্রী রড ও সিমেন্টের দাম। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ স্তিমিত হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে এ বছরই দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বেসরকারি এবং ব্যক্তিপর্যায়ের নির্মাণকাজও ধীরগতিতে এগোচ্ছে। 

এতে চাহিদা ও বিক্রি কমে নির্মাণকাজের প্রধান উপকরণ রড ও সিমেন্ট ব্যবসায় ধস নেমেছে। ব্যবহারজনিত চাহিদা বৃদ্ধি না পেলে এ খাত ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মাণকাজে সম্পৃক্তদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সিমেন্ট ও ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সরকারের বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন শিল্পেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রড ও সিমেন্টের বাজারে।

উদ্যোক্তারা আরও জানান, সরকার পরিবর্তনের পর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ ঠিকাদার গা-ঢাকা দিয়েছেন। অপরদিকে ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে সুদের হার বেড়েছে, বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়ও। কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা যাচ্ছে না। শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত ৬০-৭০ শতাংশ মূলধন জোগানের অনুরোধ করছেন এই দুই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।

অবকাঠামো উন্নয়নের অন্যতম উপকরণ সিমেন্ট।  জানা গেছে,  সিমেন্ট খাতের উৎপাদন সরকারি নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। দেশের বিভিন্ন মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। যেসব প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে; সেগুলো গত ৫ আগস্টের পর বন্ধ রয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সিমেন্ট খাতে। বিশ্ববাজার থেকে আমদানি, ডলার সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা কেটে গেলেও ব্যবহারজনিত চাহিদা বৃদ্ধি না পেলে এ খাতও ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন তারা।

সূত্র জানিয়েছে, অবকাঠামো উন্নয়ন থেমে যাওয়ার আরেক কারণ হচ্ছে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দেওয়ায় সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের উন্নয়নকাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করা না হলেও বেশিরভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা আড়ালে-আবডালে রয়েছেন। অপরদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ড্যাপের কারণেও আবাসন খাতে বেচাবিক্রি ও নতুন প্রকল্পও কমে গেছে। ফলে রড-সিমেন্টের বিক্রি কমেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ দুই খাতের উদ্যোক্তারা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

তারা বলছেন, ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগের কথা ভাবছি না।

জানা গেছে, চলতি বছরের মে-জুন মাসে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৯০ হাজার টাকার বেশি। বর্তমানে বাজারে এক লাফে দাম কমে ৮৬ হাজার থেকে ৮৭ হাজার টাকা টন দরে রড বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মে-জুনের তুলনায় সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২০-২৫ টাকা কমেছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) জানায়, দেশে ইস্পাত কারখানা দুই শতাধিক। এর মধ্যে বড় প্রতিষ্ঠান ৪০টি। প্রতিষ্ঠানগুলোর বছরে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন রড উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। যদিও দেশে বার্ষিক রডের চাহিদা ৭৫ লাখ টন। এখন পর্যন্ত এই খাতে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বছরে লেনদেনের পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দেশের কোম্পানিগুলোর রড উৎপাদনে সক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখ টন। বছরে সর্বোচ্চ চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই ব্যবহার হয় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে। বাকি ৪০ শতাংশ বেসরকারি ও ব্যক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার হয়। বর্তমানে চাহিদা কমে ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা কমেছে সরকারি প্রকল্পে। এখানে রডের চাহিদা ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসায় দামও ধারাবাহিকভাবে কমছে।

জানা গেছে, গত কয়েক দিনে সিমেন্ট ডিলারদের বিশেষ ছাড় দিচ্ছেন উৎপাদকরা। এতে বস্তাপ্রতি দাম ১০-১৫ টাকা কম রাখতে পারছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তবে এ অবস্থায় শঙ্কিত সিমেন্ট উৎপাদনকারী উদ্যোক্তারা। নব্বইয়ের দশকেও বাংলাদেশ সিমেন্ট আমদানিনির্ভর ছিল। তবে ওই সময় সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম অস্বাভাবিক কমে যায়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে