শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:১৪:০৭

হাসিনার গণভবন ছেড়ে পালানোর ঘটনা নতুন পাঠ্যবইয়ে

হাসিনার গণভবন ছেড়ে পালানোর ঘটনা নতুন পাঠ্যবইয়ে

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ অধ্যায়টি। দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, শহীদ মতিয়ুর রহমান মল্লিক, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহা, নূর হোসেনসহ বিভিন্ন শহীদের তথ্য তুলে ধরা হয়। এই অধ্যায়ের সংযোজন করা হয় জুলাই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী শহীদ হওয়া আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নাম।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনার প্রবর্তন করা কারিকুলাম বাতিল করে শিক্ষায় চালু করা হয়েছে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের কারিকুলাম। বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে স্থান পেয়েছে ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনের নানা কাহিনি, ছবি, কার্টুনসহ নানা বিষয়। জুলাই আন্দোলন চলাকালে বাড্ডায় হেলিকপ্টার থেকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে আনা হয়েছে কার্টুনের মাধ্যমে।

এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ে বলা হয়েছে ২৬ মার্চ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মেজর জিয়াউর রহমান। জন-আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে নতুন পাঠ্যবইয়ে। ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাবছরের এসব বই তুলে দেয়া হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠে ‘কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ শিরোনামে লেখা ছাপানো হয়েছে। কার্টুনের ছবিতে যে প্রতিবাদ বা বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটে, তা দেখানো হয়েছে এই লেখায়। এখানে বলা হয়েছে, ’৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই গণ অভ্যুত্থান পর্যন্ত বারবার কার্টুনে প্রতিবাদের প্রকাশ দেখা গেছে। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশের দেয়াল দেয়ালে অসংখ্য গ্রাফিতির কথাও বলা হয় এই লেখায়। এই লেখায় কার্টুনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার চিত্র।

পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ অধ্যায়টি। দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, শহীদ মতিয়ুর রহমান মল্লিক, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহা, নূর হোসেনসহ বিভিন্ন শহীদের তথ্য তুলে ধরা হয়। এই অধ্যায়ের সংযোজন করা হয় জুলাই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী শহীদ হওয়া আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নাম।

এই অধ্যায় বলা হয়েছে অধিকারের দাবি ও বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। সরকারি বাহিনী নির্মমভাবে সেই আন্দোলন দমন করতে চায়। পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, বিশাল গণ অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। বলা হয়, রাজধানীর উত্তরায় শিক্ষার্থী মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন।

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে স্থান দেয়া হয়েছে ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ অধ্যায়ের। এ অধ্যায়ে উঠে এসেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য। এখানে বলা হয়, সেদিন ৫ই আগস্ট ২০২৪- ৩৬শে জুলাই। বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইতে থেমে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা দুনিয়ার মানুষ তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে। সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে। ঘেরাও করবে গণভবন। মূলোৎপাটন করবে শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসককে। কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার উত্তরার পথে মানুষের দেখা মিলল। যাত্রাবাড়ীর দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল ধীরে ধীরে। নামল মানুষের ঢল। জনতা গণভবনে পৌঁছে যায় দুপুর নাগাদ। পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচার সরকারপ্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।

এ অধ্যায় আরো বলা হয়, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সরকার। উঠে আসে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবদানের কথাও। এ অধ্যায়ে বলা হয়, সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর আন্দোলন কর্মসূচি গতি হারাতে পারত। কিন্তু বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা তখন ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসেন।

পাঠ্যবইতে উঠে আসে আওয়ামী আমলের দীর্ঘ দুঃশাসনের কথাও। সামান্য দাবির কারণে নির্বিচারের নির্যাতন আর গুম-খুন করা হয়েছে- এ তথ্য বলা হয় পাঠ্যবইয়ে। বছরের পর বছর ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট হওয়াও উঠে আসে এ অধ্যায়ে।

আরো বলা হয়, সাবেক সরকারের দানবীয় শাসন চালানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের গল্প ছিল প্রধান অবলম্বন। কিন্তু লোকে দেখল হাজার সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরে। জাল সনদ সংগ্রহ করে চাকরির সুবিধা নিয়েছে অনেকে। সরকার সব অনিয়ম অবৈধতাকে ঢেকে দিতে চেয়েছে অবকাঠামোগত ‘উন্নয়নের গল্প’ দিয়ে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘দেশে যে কয়েকটি গণ অভ্যুত্থান হয়েছে ২০২৪-এর অভ্যুত্থান ছিল ব্যাপক। কারণ স্বৈরাচারবিরোধী এ গণ অভ্যুত্থানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নিয়েছিল। এটি বাংলাদেশের আশাবাদী হওয়ার বড় জায়গা। এই আন্দোলন, অভ্যুত্থান আমরা পাঠ্যবইয়ে স্থান দিয়েছি নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ দিতে।’

তথ্যমতে, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই আন্দোলন নিয়ে ‘সিঁথি’ নামে কবিতা। কবিতায় বলা হয়েছে, ভাই মরলো রংপুরে সেই/ রংপুরই তো বাংলাদেশ। আন্দোলন চলাকালে একজনকে মারতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর্যুপরি গুলির বিষয়টিও এসেছে। কবিতায় বলা হয়, খোদার আরশ কাঁইপা ওঠে/ শুইনা বাপের হাহাকার/ একটা মানুষ মারার লাগি/ কয়টা গুলি লাগে ছার?

তৃতীয় শ্রেণির বিশ্বপরিচয় বইয়ে অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে। চার নেতার বিবরণীতে তথ্য দেওয়া হয়েছে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। জানা গেছে, গত বছর তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে থাকা ‘আমাদের জাতির পিতা’ অধ্যায়টি এবারের পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে