এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশে শীতের প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলছে। তীব্র শীত, কনকনে হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে সাতটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে— কিছু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা বাড়লেও দিনের বেলায় শীতের অনুভূতি বেড়েই চলেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আজ কিছুটা কমে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। ঢাকায় আজ তাপমাত্রা ছিল ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া, রাজশাহীতে তাপমাত্রা কমে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেটে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রামে ১৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খুলনায় ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশের সাতটি জেলা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, রংপুর ও তেঁতুলিয়া, এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের অধীনে রয়েছে।
শৈত্যপ্রবাহের জন্য তাপমাত্রা ৮.১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৬.১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রা নিয়ে তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪.১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। দেশের বিভিন্ন অংশে শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিশেষভাবে কষ্টকর হচ্ছে।
মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক যোগাযোগ, বিমান চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে, যানবাহন চলাচলে দেরি হতে পারে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আংশিক মেঘলা আকাশ থাকতে পারে, তবে মূলত শুষ্ক আবহাওয়া বজায় থাকবে। তবে, কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের প্রকোপ কমবে না, বিশেষ করে দিনের বেলায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনি এবং রোববার পূর্বাভাসেও একই ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে, যার মধ্যে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, শীতের অনুভূতি বাড়বে কারণ রাত এবং দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকবে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চলতি মাসে ৩ থেকে ৫টি শৈত্যপ্রবাহের শঙ্কা রয়েছে। শীতের অনুভূতি বাড়াতে তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকার কারণে আরও শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তরপূর্ব অঞ্চলে দুটি মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এছাড়া, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, চলতি মাসে দেশের অধিকাংশ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
শীতের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমস্যা বাড়ছে। তীব্র শীতের কারণে রোগ-শোক, বিশেষ করে শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে, যা বিশেষভাবে গ্রামীণ অঞ্চলে আরও বেশি প্রভাব ফেলছে।
শীতের কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে তেঁতুলিয়া, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে তাদের কাজকর্মে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন।
এদিকে, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে, যা আগামী কয়েকদিনে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।