শনিবার, ০৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:৪৭:১৭

অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে নতুন পেঁয়াজের দাম

 অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে নতুন পেঁয়াজের দাম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও কৃষি শ্রমিকের দাম বেড়েছে। সে অনুপাতে দাম বাড়েনি কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের। হঠাৎ পেঁয়াজের দামপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষক। বর্তমানে মেহেরপুরের বাজারগুলোতে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে।

গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষকেরা গত এক যুগের মধ্যে এ প্রথম লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর জেলার বাজারগুলোতে দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। ফলে, নায্যমূল্যে না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার পেঁয়াজ চাষি।

এবার জেলায় লাল তীর কিং, মেটাল কিং, তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১ এবং কিং সুপার জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।

গত কয়েক সপ্তাহ আগেও বাজারে পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজের অব্যাহত দরপতন হয়েছে। জেলার খুচরা বাজারগুলোতে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে।

পেঁয়াজ চাষিদের আবেদন, বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করে দেশীয় পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে জেলা কৃষিবিভাগ বলছে, পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও একসঙ্গে বাজারজাত করায় দাম কমে গেছে। কিছুদিন সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারলে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্যে পাবেন জেলার চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। অথচ, গত মৌসুমে এ জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল মাত্র ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কয়েক বছর পেঁয়াজের দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় এ বছর চাষিরা কোমর বেঁধে পেঁয়াজ চাষ করেছেন।

জেলার বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০ থেকে ১৫০ টাকা।

মেহেরপুর বড়বাজার এলাকার কাঁচাবাজারে নতুন পেঁয়াজের সঙ্গে পুরোনো পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। তবে, পুরোনো পেঁয়াজের তুলনায় ক্রেতারা নতুন পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। মুড়িকাটা এক কেজি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, চলতি বছরে তার ছয় বিঘা, প্রতিবেশী হারান আলীর ১১ বিঘা, সমসের আলীর ৮ বিঘা, সাইদুল ইসলামের ৯ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এছাড়া এ গ্রামের শতাধিক কৃষক পেঁয়াজ চাষ করেছেন।

তারা বলেন, লোকসানের হিসাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি মজুরি খরচ, সার ও কীটনাশক, বীজ কেনা ও লিজ খরচ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। দাম এভাবে কমে গেলে মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে তাদের।

স্থানীয় পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিঘা প্রতি জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। জমির লিজ ২০ হাজার টাকা মিলে মোট ৭০-৭৫ হাজার টাকা খরচ। গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজের ফলনও কম হচ্ছে। গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৮০ থেকে ১শ মণ পেঁয়াজ পেলেও এ বছর বীজে সমস্যা থাকার কারনে উৎপাদন হচ্ছে ৬০ থকে ৭০ মণ।

বর্তমান পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষির ঘরে আসছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ চাষে উচ্চমূল্যে বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক, কৃষি শ্রমিকের মুজুরি,পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ করতে যেয়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। সেই হিসেবে পেঁয়াজ উত্তোলনের ভরা মৌসুমে এর দরপতনে চাষির মাথায় হাত। চাষিরা বলছেন এ লোকসান থেকে বাঁচতে উৎপাদনের ভরা মৌসুমে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করাসহ সরকারি উদ্যেগে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে লোকসান থেকে বাঁচা সম্ভব।

গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের তহশিন মেম্বর বলেন, আমি গেল মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এবার চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এক বিঘা পেঁয়াজ চাষে লিজসহ খরচ হয় অন্তত ৫০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ মণ। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের মারাত্মকভাবে দরপতন হওয়ায় চাষের অর্ধেক খরচ উঠছে না। মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হবে।

সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মহিবুল বলেন, এ বছর আমার ৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। জমি লিজ নিয়ে তিনি এ চাষ করেছেন। পেঁয়াজের ফলনও কম আবার দরপতন। সব মিলিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

সাহারবাটি গ্রামের কৃষক মহিবুল ইসলাম জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। চাষে মোট খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এ জমিতে পেঁয়াজ পেয়েছেন ৬৫ মণ। প্রতি মণ ৬০০ টাকা কেজি দরে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজ বিক্রি করে মুনাফা তো হয়নি, উল্টো কয়েক হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল ১০ দিন আগেও খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সে সময় চাষিরা লাভের মুখ দেখলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাষিদের মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেছে। বর্গা চাষিরা অনেকেই বড় ধাক্কা খেয়েছেন পেঁয়াজের দরপতনে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, চলতি মৌসুমে চাষিরা গতবারের তুলনায় এবছর দ্বিগুণ পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তবে পেঁয়াজের বাজারে দরপতনে অনেক চাষি লোকসানে পড়বেন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও বাইরের বাজার খোঁজ করা হচ্ছে। চাষিরা যাতে লোকসানে না পড়েন সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে