এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় নিভৃতপল্লি বাগবাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৯ দফা কর্মসূচি সামনে রেখে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। তার পিতা মনসুর রহমান পেশায় ছিলেন রসায়নবিদ। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান পিতার কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী শহিদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমাদৃত। একজন সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও জিয়াউর রহমানের জীবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের সংকটে তিনি বারবার ত্রাণকর্তা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, স্বয়ং অস্ত্র হাতে যুদ্ধও করেছেন।
যুদ্ধ শেষে তিনি আবার সৈনিক জীবনে ফিরে গেছেন। জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিএনপি। তার গড়া সেই রাজনৈতিক দল তার সহধর্মিণী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও ছেলে তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত।
অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসিকতা, সততা-নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান অসামান্য। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেছেন। আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশ্ব-মানচিত্রে তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত করেছেন। জাতির মর্যাদাকেও তিনি বিশ্বব্যাপী সমুন্নত করেছেন।
জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে এখনো স্মরণ করেন। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তিনি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহিদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিকনির্দেশনা। তার প্রতিষ্ঠিত বিএনপি দেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তারই সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান নেতৃত্বের হাল ধরেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।
দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তিনি আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন। জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তাদের জাগিয়ে তুলতে তিনি সফল হয়েছিলেন। তার স্বল্পকালীন শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি যে গভীর দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তা আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। এমনকি তার রাজনৈতিক বিরোধীরাও মৃত্যুর পর তার সততা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেনি। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ কারণেই এ দেশের জনগণের অন্তরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শাহাদতবরণ করেন দেশপ্রেমিক এই রাষ্ট্রনায়ক।
মির্জা ফখরুলের বাণী : জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে শহিদ জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, দেশের সব ক্রান্তিকাল উত্তরণে শহিদ জিয়া ছিলেন জাতির দিশারি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর আক্রমণ করার পর তিনি পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৬ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন অসীম বীরত্বে। সেদিন থেকেই দেশবাসী তার অসাধারণ নেতৃত্বের পরিচয় পায়। স্বাধীনতা-উত্তর দুঃসহ স্বৈরাচারী দুঃশাসনে চরম হতাশায় দেশ যখন নিপতিত, জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া যখন বাধাগ্রস্ত হয় ঠিক সেই সংকটের একপর্যায়ে জিয়াউর রহমান জনগণের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। তাই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের নীলনকশা বাস্তবায়নের কাঁটা ভেবে জিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
কিন্তু তার এই আত্মত্যাগে জনগণের মধ্যে গড়ে উঠে দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে এক ইস্পাত কঠিন গণঐক্য। বিএনপির মহাসচিব মহান এই রাষ্ট্রনায়কের জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা; গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
কর্মসূচি : জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ বেলা ১১টায় শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শেরেবাংলা নগরের মাজারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মী পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। দুপুর ২টায় রমনার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্রসহ পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর উদ্যোগে দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও বিভিন্ন ইউনিটগুলোতে স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বগুড়ায় ৭ দিনের কর্মসূচি : বগুড়া ব্যুরো জানায়, জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বগুড়া জেলা বিএনপি ৭ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৮ জানুয়ারি সকাল ৭টায় শহরের নবাববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপি অফিসে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সোয়া ৭টায় শহিদ জিয়ার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ।
বাদ জোহর এবং বাদ আসর বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে মৎস্যজীবী ও তাঁতীদলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল। ১৯ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ছাত্রদলের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ। সকাল ১০টায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে ও ড্যাব বগুড়ার সহযোগিতায় দত্তবাড়ি অ্যাজমা কেয়ার অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টারে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প। বাদ আসর বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে জেলা বিএনপির দোয়া মাহফিল।
২০ জানুয়ারি সকাল ১০টায় জেলা যুবদলের উদ্যোগে গাবতলীর বাগবাড়িতে কম্বল বিতরণ, বাদ জোহর শহরের দক্ষিণ কাটনারপাড়া রওশন শাহ মাদ্রাসায় শহর বিএনপির খাদ্য বিতরণ। বেলা ৩টায় শহরের শহিদ টিটু মিলনায়তনে জেলা বিএনপির আলোচনা সভা। ২১ জানুয়ারি মহিলা দলের উদ্যোগে শহরের ফুলবাড়ি শিশু পরিবারে খাদ্য বিতরণ, বাদ আসর মহাস্থান মাজার মসজিদে সদর উপজেলা বিএনপির দোয়া মাহফিল।
২২ জানুয়ারি বাদ আসর বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে স্বেচ্ছাসেবক দলের দোয়া মাহফিল, বাদ জোহর আদালত চত্বরে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের খাদ্য বিতরণ। ২৩ জানুয়ারি বাদ জোহর বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে কৃষক দলের দোয়া মাহফিল, বাদ জোহর দলীয় কার্যালয়ে শ্রমিক দলের শীতবস্ত্র বিতরণ।
এছাড়া ২৪ জানুয়ারি বাদ আসর শহরের নবাববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ে জিয়া পরিষদের কম্বল বিতরণ। এছাড়াও সব উপজেলা ও পৌর বিএনপি ওই কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচিগুলোতে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মীকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।