এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রড-সিমেন্ট শিল্প খাত। নির্মাণশিল্পের এ খাতের ভরা মৌসুমেও ক্রেতাদের কাছ থেকে আসছে না কাক্সিক্ষত সাড়া। ফলে চাহিদা ও উৎপাদনের গ্রাফ দুটিই এখন নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারি-বেসরকারি বড় এবং মাঝারি নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ থাকায়, নতুন করে প্রকল্প শুরু না করার প্রভাব পড়েছে এ খাতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চরম সংকটে পড়বে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
দেশের বৃহৎ রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হোসাইন আকবর আলী বলেন, ‘বর্তমানে রড বিক্রির অবস্থা খুবই করুণ। রড তৈরি কারখানা মালিকদের কারোরই অবস্থা ভালো নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হবে না; ততদিন এ অবস্থা চলতেই থাকবে।
সিমেন্ট তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডায়মন্ড সিমেন্ট’র উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকিম আলী বলেন, ‘সিমেন্ট বিক্রিতে প্রত্যাশিত সাড়া নেই।
সরকারি-বেসরকারি নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় সিমেন্ট বিক্রির অবস্থা তলানিতে। ফলে কারখানার উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছি। অথচ এমন ভরা মৌসুমে সিমেন্টের চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
জানা যায়, বছরের প্রথম কোয়ার্টারকে নির্মাণশিল্পের ভরা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে পুরো বছরের রড ও সিমেন্টের মোট চাহিদার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বিক্রি হয়। মৌসুমকে মাথায় রেখেই উৎপাদন ও বিপণন পরিকল্পনা তৈরি করে রড-সিমেন্ট তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এবার নির্মাণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগে চাহিদা পতনের কারণে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কমেছে উৎপাদনও।
অথচ বিগত বছরগুলোতে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এ তিন মাস রড ও সিমেন্টের দাম থাকে ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর এ সময়ে রড বিক্রি হয়েছে টনপ্রতি ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৭ হাজারের মধ্যে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন।
চলতি বছর রড বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। একই অবস্থা সিমেন্টের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে কোম্পানি ভেদে প্রতি বস্তা ৪৭০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৪৯০ থেকে ৫৩০ টাকা। উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। এরই মধ্যে প্রায় সব রড এবং সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন করেছে অর্ধেক।
তবে আশার কথা হচ্ছে ডিসেম্বরের শেষের দিকে এসে কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ব্যবসায়ীদের দাবি- ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ক্রমান্বয়ে কমেছে রড ও সিমেন্টের চাহিদা।
কারণ হচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। রাজনৈতিক বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পাওয়া ঠিকাদারদের বেশির ভাগই রয়েছেন পলাতক।
এ ছাড়া নতুন করে বড় ও মাঝারি কোনো প্রকল্পে হাত দেয়নি সরকার। বেসরকারি পর্যায়ের নির্মাণকাজও রয়েছে একপ্রকার বন্ধ। এতে করে রড, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা নেমে হয়েছে অর্ধেকে। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলে রড তৈরির কারখানা রয়েছে ২ শতাধিক। এ খাতে বিনিয়োগ রয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিকটন রড উৎপাদন করে। তবে রডের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ৭৫ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত রডের ৬৭ শতাংশই ব্যবহার হয় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে।
বাকি ৩৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় বেসরকারি খাতে। এ ছাড়া দেশে সিমেন্ট উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে প্রায় অর্ধশত। এসব প্রতিষ্ঠানের বছরে উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ টন। তবে দেশে প্রতি বছর সিমেন্টের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ কোটি টন।
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এলাকার নির্মাণসামগ্রীর পাইকার বিক্রি প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ স্টিল করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী হাসান রুবেল বলেন, ‘রড সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রী বিক্রি গত কয়েক মাস ধরেই নিম্নমুখী।
কয়েক মাস আগে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১৫ হাজার বস্তা সিমেন্ট এবং ১৫০ টন রড বিক্রি হতো। বর্তমানে নির্মাণকাজ একপ্রকার বন্ধ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও বন্ধ। যার প্রভাব পড়েছে বিক্রিতে। বর্তমানে বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।’