বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:০৯:৩৩

হঠাৎ করে বাংলাদেশি আলু বিদেশে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি

হঠাৎ করে বাংলাদেশি আলু বিদেশে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চাহিদার তুলনায় অধিক আলু চাষ করে বিপাকে পড়েছে কুড়িগ্রামের আলুচাষীরা। বাজারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া ও নেপালে আলু রফতানির সুযোগ হওয়ায় কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন চাষীরা।

এবছর অনেক চাষী কোটি টাকা ব্যয় করে আলুচাষ করায় এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের দাবি, সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে চাষীরা লোকসান কমানোর পাশাপাশি লাভের মুখও দেখবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে এখন পর্যন্ত আট হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে আলুচাষ। চাহিদার তুলনায় অধিক চাষ হওয়ায় বাজারে দরপতন। খরচ উঠাতে না পেরে চাষীদের চোখে-মুখে চরম হতাশা।

জানা গেছে, পাইকাররা ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। দামের এমন অবস্থা হওয়ায় অনেকে আলু জমিতেই ফেলে রেখেছেন। তবে হঠাৎ করে আলু বিদেশে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা আশার আলো দেখছেন। তবে মূল্যবৃদ্ধি না হওয়ায় লাভের অর্থটা আসছে না।

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোব গ্রামের চাষী সফিকুল জানান, প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ শতক জমিতে আলু লাগিয়েছি। আট টাকা থেকে ১০ টাকা দাম হওয়ায় জমিতে আলু ফেলে রেখেছিলাম। আজ রফতানির জন্য ১২ টাকা কেজি দরে পাইকারের কাছে আলু বিক্রি করলাম। এতে আমি ২৫ হাজার টাকার মতো পাবো। এই আলু চাষ করে আমার ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়ে গেল।

এদিকে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে আলুর সাইজ ভালো না হওয়ায় সব জমি থেকে আলু নিচ্ছেন না সরবরাহকারীরা। তারা জানান, রফতানির জন্য আলুর সাইজ ৮০ গ্রাম থেকে ৪০০গ্রাম হতে হবে। আন্ডার সাইজ বা খারাপ আকৃতির আলু গ্রহন করা হচ্ছে না। ফলে এখানেও চাষীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

চর সারডোবের আলুচাষী কাদের মিয়া জানান, আমি ২ কোটি টাকা খরচ করে ৯৫ একর জমিতে আলুচাষ করেছি। বর্তমান বাজারমূল্য দেখে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সামনে আলুর দাম না বাড়লে আমরা মাঠে মারা যাবো।

কাদের মিয়া আরো জানান, আলুচাষে এখন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এক একর জমি ভাড়া নিতে খরচ লাগে ৪০ হাজার টাকা। এতে এক হাজার আলু বীজ কিনতে লাগে ৭০ হাজার টাকা। এছাড়াও সার, সেচ, কীটনাশক ও কৃষক খরচ লাগে প্রায় ৯০ হাজার টাকার মতো। মোট খরচ দাঁড়ায় দুই লক্ষ টাকা। আলু একরে পাওয়া যায় ২০০ বস্তা। প্রতিবস্তায় ৬০ কেজি হলে মোট আলু পাওয়া যায় ১২ হাজার কেজি। দেখা যাচ্ছে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ দাড়াচ্ছে ১৬ দশমিক ৬৬ টাকা। সেই আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হলে বড় চাষীরা বিরাট লোকসানে পরবেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার আলু রফতানিকারক সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের ২৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়া ও নেপালের উদ্দেশ্যে কুড়িগ্রাম থেকে তিনটি ট্রাকে ৪৫ টন আলু চট্টগ্রাম বন্দরে গেছে। আজও দুই ট্রাক আলু সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে চাহিদা বৃদ্ধি পেলে আলুচাষীদের ক্ষতি কিছুটা কমবে।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আলুচাষীদের জন্য বড় খবর হলো বিদেশে আলুর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক মূল্যে আলু বিক্রি করতে পারলে তারা লাভবান হতে পারবেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে