এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বারবার পরকীয়া প্রেমিকের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন নারী। তাই অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়ে প্রেমিককে শ্বাসরোধে হত্যা করেন ৩২ বছর বয়সি ওই নারী। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বরেলিতে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই নারী বলেছেন— ইকবাল নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে তাকে ব্ল্যাকমেল করে আসছিল।
ইকবাল ছিলেন একজন জরি কারিগর। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ করতেন। এভাবেই তাদের পরিচয়। প্রথমদিকে ফোন নম্বর বিনিময়, কথাবার্তা সব ঠিক ছিল।
কিন্তু একদিন ইকবাল ওই নারীকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান। সেখানে গিয়ে ওই নারী বুঝতে পারেন, ইকবাল কেবল বন্ধুত্ব চাননি, তার ইচ্ছা অন্য কিছু। ইকবাল ওই নারীকে বাধ্য করেন তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে। ঘনিষ্ঠ না হলে তাদের মধ্যে ফোনে হওয়া সব কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন।
এই হুমকির পর ওই নারীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তাই আমি সহ্য করে যাচ্ছিলাম। একবার নয়, বহুবার ব্ল্যাকমেলের শিকার হই। প্রতিবারই ইকবাল আমাকে বাধ্য করতেন, আর প্রতিবারই নিরুপায় হয়ে সহ্য করতাম।
অবশেষে একরাতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, হয় তিনি নিজে মরবেন, না হয় ইকবালকে সরিয়ে দেবেন।
পরিকল্পনা অনুসারে গত বুধবার সন্ধ্যায় ইকবাল তার স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি রেখে ফিরছিলেন। ফেরার পথে ফোনে ওই নারীর সঙ্গে কথা হয়। ফোনে ওই নারী জানান, ‘আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
ইকবাল রাজি হয়, কিন্তু সে নিশ্চিত করতে চায়, ওই নারীর স্বামী যেন কোনোভাবে টের না পায়। তাই ইকবাল ওই নারীকে দুটি ঘুমের ওষুধ দেয় এবং বলে, ‘এগুলো তোমার স্বামীর চায়ে মিশিয়ে দাও, সে কিছু বুঝতে পারবে না।’ রাত ৮টার দিকে ওই নারী তার স্বামীর জন্য চা বানান। স্বামীর কাপে ইকবালের দেওয়া ওষুধ মিশিয়ে দেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে স্বামী ঘুমিয়ে পড়েন।
রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ফোন বেজে ওঠে। ইকবাল ওই নারীকে বলেন, ‘এখন চলে এসো। আমি একা আছি।’ সেই মুহূর্তেই ওই নারী দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেন যে, আজ ইকবালকে সরিয়ে দেবেন। পুলিশের কাছে তিনি বলেন, ‘তার বাড়িতে যাওয়ার সময় আমি ভাবছিলাম, হয় আজ আমি মরব, না হলে তাকে মেরে ফেলব।’
ওই নারী ইকবালের বাড়িতে পৌঁছার পর তারা কথাবার্তা শুরু করেন। ওই নারী বলেন, আমরা কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণ পর সে আবার আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমি ইকবালের দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরি। তারপর তার বুকের ওপর বসে পড়ি। ইকবাল তখনো ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছিল।
কিন্তু এক হাতে তার মুখ বন্ধ করে দেন, অন্য হাতে শ্বাসরোধ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে ইকবাল নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। যখন তিনি নিশ্চিত হন যে, ইকবাল আর বেঁচে নেই, তখন ঠান্ডা মাথায় তার লাশ সিঁড়ির দিকে টেনে নিয়ে যান। এরপর চুপচাপ নিজের বাড়ি ফিরে আসেন। দুদিন পর ইকবালের মরদেহ তার বাড়ির কাছে পাওয়া যায়। তদন্ত শুরু হয়, এবং শেষমেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ওই নারী।