মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১১:১৫:৫৪

সিনেমাকেও হার মানিয়েছে এক ত্রিভুজ প্রেমের করুণ পরিণতি!

সিনেমাকেও হার মানিয়েছে এক ত্রিভুজ প্রেমের করুণ পরিণতি!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : প্রেমিকার মোবাইল নম্বর থেকে মেসেজ পেয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় ছুটে এসে ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়েছেন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী তাজকির আহম্মেদ (২৩)। প্রেমিকা সীমার ফোন ব্যবহার করে কৌশলে তাজকীরকে ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে এনে সীমার সাবেক স্বামী অভিসহ ৪ বন্ধু মিলে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরে মরদেহ ফেলে দেয়া হয় নদীতে।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান উপ-কমিশনার (সিটিএসবি) এমএম শাকিলুজ্জামান।

 নিহত তাজকীর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নৌখোলা ঝাউডাঙ্গা গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকায় থাকতেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনা এসে নিখোঁজ হন তাজকীর। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভৈরব নদের গিলেতলা বালুরঘাট থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে লোমহর্ষক হত্যার ঘটনা।
 
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সীমাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হলেও অভি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
 
এদিকে তাজকীর আহম্মেদ হত্যায় সরাসড়ি জড়িত খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের ছেলে মশিউর রহমান জিতু (২৪), বিআইডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম কাজীর ছেলে রিয়াদ কাজী (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা দুজন অভির বন্ধু।

গত শনিবার (১৫ মার্চ) ও রোববার (১৬ মার্চ) নড়াইল ও খুলনার খালিশপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এরইমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার এমএম শাকিলুজ্জামান জানান, সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম করায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভি ও তার বন্ধুরা তাজকীরকে হত্যা করেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাজকীরকে কৌশলে ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে আনেন প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সাবেক স্বামী ইসমাইল হোসেন অভি। পরে অভিসহ ৪ বন্ধু মিলে তাজকীরের হাত-পা বেঁধে মুখে টেপ পেঁচিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এরপর পুরুষাঙ্গে উপর্যুপরি আঘাত করে এবং গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে তাজকীরের মরদেহ বস্তায় ভরে ভৈরব নদে ফেলে দেয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনার ভৈরব নদ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতজনকে আসামি করে খালিশপুর থানায় মামলা করেন তাজকীরের বাবা মুরাদ হোসেন। সে সময় প্রেমিকা সীমাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে হত্যার মূল আসামি ইসমাইল হোসেন অভিকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।
 
সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার আরও বলেন, প্রেমিকা সীমার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে তাজকীর তার চাচাতো ভাই রনির শ্যালিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকা থেকে খুলনা আসেন। তাজকীর গত ২১ ফেব্রুয়ারি খুলনার গোয়ালখালি এলাকায় তার মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদের বাড়িতে মাত্র এক ঘণ্টার জন্য আসেন এবং বাসাতে কিছু সময় থেকে প্রেমিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হন।

এ ঘটনায় তাজকীরের বাবা মুরাদ হোসেন ২৫ ফেব্রুয়ারি বাদী হয়ে ৫ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২ থেকে ৩ জনকে আসামি করে খালিশপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন। সেদিনই খালিশপুর বিআইডিসি রোডের বাসিন্দা জলিল হাওলাদারের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার সীমা (২০), হাউজিং বাজার এলাকার মিন্টু মিয়ার স্ত্রী ও মূল আসামি অভি মা লাবণী বেগম ও একই এলাকার মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে ইজিবাইক চালক শহিদুল ইসলাম সাহিদকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলা তদন্তকালে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী থানাধীন ভৈরবের বালুর মাঠ ঘাটে বস্তাবন্দি অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাজকীরের বাবা এবং তাদের নিকট আত্মীয়রা খুলনা মেডিকেল হাসপাতাল মর্গে উপস্থিত হয়ে মরদেহে পরিহিত চেক শার্ট ও পরনের প্যান্ট দেখে অজ্ঞাত পরিচয় মরদেহটি তাজকীর আহম্মেদের বলে শনাক্ত করেন।

উপ-কমিশনার এমএম শাকিলুজ্জামান আরও বলেন, তদন্তে জানা যায়- প্রেমিকা সীমা সম্পর্কে তাজকীরের বাবার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে রনির শ্যালিকা।
 
এদিকে সীমার সঙ্গে ইসমাইল হোসেন অভির তিন বছর পূর্বে পরিবারের অমতে বিয়ে হয়। পরবর্তীতে অল্পদিনের মধ্যে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায় এবং অভি দেশের বাইরে চলে যান। এই সুযোগে তাজকীর আহম্মেদের সঙ্গে সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭ থেকে ৮ মাস পরে অভি দেশে ফিরে এসে প্রাক্তন স্ত্রী সীমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হয়।

এ সময়ে ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, যা একমাত্র সীমা জানতেন। সীমা একইসঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুই প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক চলমান রাখেন, যাতে কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারেন। অভি আর সীমার পুনরায় সম্পর্কের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবারের লোকজন জানলেও ভুক্তভোগী তাজকীরের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি কেউ জানতেন না।

কিন্তু এক সময় সীমার সঙ্গে তাজকীরের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যান অভি। এ নিয়ে সীমা এবং অভির মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। অভি তাজকীরকে শায়েস্তা করার জন্য সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দিয়ে তাজকীরকে খুলনায় আসতে বলেন। তাজকীর খুলনা এলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে হাউজিং বাজার এলাকায় অভির নিজ বাসায় নিয়ে যান।

এরপর অভিসহ ৪ বন্ধু মিলে তাজকীরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। পরবর্তীতে তারা ৪ বন্ধু মিলে ডাকবাংলা থেকে ১০০ টাকা দিয়ে বস্তা ক্রয় করে তাজকীরের মরদেহ বস্তায় ভরে ইজিবাইকে করে ভোর ৫টার দিকে হার্ডবোর্ড খেয়াঘাটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ট্রলারে নিয়ে ভৈরব নদের মাঝখানে মরদেহ ফেলে দেয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে