এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : যদিও বহুদিন ধরেই স্বর্ণ ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে পরিচিত, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটিকে অনেকে ‘স্মার্ট ইনভেস্টমেন্ট’ হিসেবেও দেখছেন। কারণ এর চাহিদা যেমন স্থিতিশীল, তেমনি মূল্যও দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—এই বাজারেও ঝুঁকি আছে। যদি হঠাৎ করে বিশ্ব রাজনীতির অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায়, বা যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার বাড়িয়ে দেয়, তাহলে স্বর্ণের দামে হঠাৎ পতন ঘটতেও পারে।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপট: বিনিয়োগের সুযোগ না বিপদ?
বাংলাদেশেও স্বর্ণ দীর্ঘদিন ধরেই মূল্য সংরক্ষণের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্থানীয় বাজারেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এরমধ্যেই দেশে স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ওপরে উঠেছে।
বিনিয়োগকারী ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে চাইলে বাজার পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে এগোনো উচিত। বিশেষ করে যেহেতু স্বর্ণে তাৎক্ষণিক লভ্যাংশ মেলে না, তাই এটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করলেই ভালো।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, চলমান যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি কারণে মূলত বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে। ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর হঠাৎ করেই স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়েছিল। তবে ট্রাম্প চীন বাদে অন্যান্য দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করায় ফের বাড়ছে দাম। যা এরই মধ্যে ৩ হাজার ২০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এছাড়া ফেডের সুদের হার, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও নানা অস্থিরতায় অস্থির স্বর্ণের বাজার।
এ অবস্থা চলমান থাকলে খুব শিগগিরই বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৩০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে বলেও জানান মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে মানুষ বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। এ অবস্থা চলমান থাকলে ৩ হাজার ৫০০ ডলার প্রতি আউন্সও অতিক্রম করতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।
দেশের বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, চলমান অস্থিরতায় চলতি বছর দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত ১৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে দাম পৌঁছেছে ১ লাখ ৬০ হাজারের ওপরে। এ অবস্থা জারি থাকলে চলতি বছর স্বর্ণের ভরি ২ লাখের কাছাকাছি চলে যেতে পারে, আবার ২ লাখ টাকার মাইলফলকও অতিক্রম করতে পারে।
তবে স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বমুখীতায় দেশের বাজারে ৭০-৮০ শতাংশ বেচাকেনা কমে গেছে বলেও জানান তিনি। মাসুদুর রহমান বলেন, দাম বাড়ায় সব দেশেই বেচাবিক্রি কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও।
বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগের বিকল্প সংকোচনের এই সময়ে স্বর্ণ তার ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা আবারও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যদিও প্রতিটি বিনিয়োগের মতো এটিতেও ঝুঁকি আছে, তবে সঠিক সময়ে, পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করলে স্বর্ণ হতে পারে এক নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।