বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৫০:১১

এবার যে নতুন উপায় আলুসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষণের

এবার যে নতুন উপায় আলুসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষণের

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আলুসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষণে বগুড়ায় ৬৭টি অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করেছে কৃষি বিপণন বিভাগ। কোনোরকম বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই এসব ঘরে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত ৩৫ মেট্রিক টন ফসল সংরক্ষণ করা যায়। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে, অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণে সমবায় বিপণন বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষকদের মাঝে।

বগুড়ায় এ বছর ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। জেলার চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টন মিটিয়ে ৪২টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায় মাত্র ৪ লাখ মেট্রিক টন। এ কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে দ্রুত আলু বিক্রি করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

 সংকট সমাধানে এ বছর জেলায় ৬৭টি অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন বিভাগ। ছোট কুঁড়ে ঘরে বস্তায় বস্তায় মজুত করা হয়েছে আলু। নাম দেয়া হয়েছে অহিমায়িত মডেল ঘর। কোনোরকম বিদুৎ সংযোগ ছাড়াই এ ঘরে মাসের পর মাস ফসল সংরক্ষণ করা যায়।

দেড় হাজার কৃষক প্রায় ২২শ' মেট্রিক টন আলু বিনা খরচে এসব ঘরে সংরক্ষণ করেছেন। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩৫ মেট্রিক টন করে আলু সংরক্ষণ করা যাবে ৩ থেকে ৪ মাস।

 আবহাওয়া ভালো থাকলে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত রাখা যাবে। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে বলে বলে জানান কৃষক। চাষিরা বলেন, কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করলে ইচ্ছেমতো আলু বের করে বিক্রি করা যায় না। তবে নতুন এই পদ্ধতিতে যে কোনো সময় আলু বের করে বিক্রি করা যায়।

বগুড়া সদরের কাজী নুরুইল এলাকার কৃষক আব্দুর রউফ জানান, ইচ্ছামতো আলু সংরক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিক্রি করা যায়। এখানে আলু রাখার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যখন ইচ্ছা রাখা যাবে যখন ইচ্ছা পারিবারিক চাহিদা পূরণ কিংবা বাজারে বিক্রি করতে পারবে।

সাবগ্রাম এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, মডেল ঘর পেয়ে উপকৃত হচ্ছে চাষি। কোল্ডস্টোরেজে বৈদ্যুতিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় আর এখানে প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হবে। এই ঘর দেখে অনেক কৃষক এখন ব্যক্তিগত উদ্যোগে মডেল ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণে সমবায় বিপণন বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষকদের মাঝে। কৃষি বিপণন বিভাগের মাঠ ও বাজার পরিদর্শক আবু তাহের বলেন, আলু হিমাগারে সংরক্ষণ না করে বসতবাড়িতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উত্তোলন মৌসুমের চেয়ে বেশি দাম পাবেন চাষি। ১৫ থেকে ২০ বছর ব্যবহারযোগ্য এসব মডেল সংরক্ষণাগার উঁচু ও খোলা এবং আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে।

 বগুড়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক বলেন, কৃষকের বসতবাড়িতে রাখার জায়গার অভাব ও নগদ টাকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে অনেকে দ্রুত আলু বিক্রি করে দেন। এতে তারা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হন। অহিমায়িত মডেল সংরক্ষণাগারে কৃষকরা বিনা খরচেই আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন। আলু বিক্রি করে দেয়ার পর পেঁয়াজ, মিষ্টিকুমড়া, ভুট্টা, কচুরমুখিসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণ করা যাবে।

তিনি আরও জানান, অহিমায়িত মডেল ঘরে আলু রাখার কিছু শর্তও আছে। এখানে সঠিকভাবে বাছাই করা আলু সংরক্ষণ করতে হবে। কাটা, ফাটা, অপরিপক্ব, রোগযুক্ত ও ছাল ওঠা আলু রাখা যাবে না। সংরক্ষণাগারে যাতে সূর্যের আলো ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

বগুড়ায় অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণে বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার ও তাপ শোষণে ককশিট ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে