এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঈদের পর থেকেই বাজারে ঊর্ধ্বমুখী সবজির দাম। চলতি সপ্তাহে এই বাজারে আরও চড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁপে ও ধনেপাতার দাম। ঈদের পর থেকে ভোক্তাকে স্বস্তি দেয়া মুরগির বাজারও এ সপ্তাহে ঊর্ধ্বমুখী।
শুক্রবার (২ মে) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বাজারে সরবরাহ কমের অজুহাতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি। হাতে গোণা দুই-একটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রীষ্মকালীন সবজি না আসায় দাম কমছে না।
কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, বাজারে সবে উঠতে শুরু করেছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। এখনও পুরোদমে আসা শুরু হয়নি। তাই কয়েকটি সবজির দাম চড়া। সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি করলা ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা ও টমেটো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, পটোল ৫০-৬০ টাকা ও সজনে ডাটা ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি পিস চালকুমড়া ৪০ টাকা ও লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা।
পেঁপের দাম প্রসঙ্গে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে দাম বাড়ে পেঁপের। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
নাবিল নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পেঁপের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় দাম বেড়েছে। তবে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে।
ক্রেতাদের দাবি, গরমকে পুঁজি করে শাক-সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যাতে পকেট কাটছে ভোক্তার।
রমিজ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়তি। তবে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া, কিছু করার নেই।
নতুন করে না বাড়লেও আগে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে যা কেনাবেচা হচ্ছে ৭০ টাকায়। আর কেজিতে ৫০ টাকার বেশি বেড়ে প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
বিক্রেতাদের দাবি, এবার মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত কম হলেও গত মাসের শেষদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। এতে মরিচ ও ধনেপাতা পচে যাচ্ছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে ঈদের পর থেকে ভোক্তাকে স্বস্তি দেয়া মুরগির বাজার চড়তে শুরু করেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কিছুটা সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা দিদার বলেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ কম। মূলত খামারিরা কম মুরগি সরবরাহ করায় বাজারে কিছুটা সরবরাহ কমেছে। এতে দাম বেড়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ১০-৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৭০ টাকায়। এছাড়া দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
আর গত সপ্তাহ থেকে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০-১৩০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখ থেকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রমজানজুড়ে স্বস্তি দেয়া পেঁয়াজ। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর বলেন, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আলুর দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর জন্য গুনতে হচ্ছে ২০-২২ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিকেজি আমদানি করা রসুনের জন্য ১৮০ থেকে ২২০ ও দেশি রসুনে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা ও শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২,৫০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত।