সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫, ১০:৩৯:৩০

একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি ডা. জোবাইদা রহমান

একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি ডা. জোবাইদা রহমান

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দীর্ঘ ১৭ বছর পর শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরছেন ডা. জোবাইদা রহমান। স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি ডা. জোবাইদা রহমান। স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র সন্তান জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে ছিলেন।  

লন্ডনে চিকিৎসা শেষে আগামী ৬ মে (মঙ্গলবার) দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের পাঠানো একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ওইদিন সকালে তিনি ঢাকায় পৌঁছাবেন। বিএনপি থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০২৩ সালের এক রায়ে ঢাকার একটি আদালত জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আদালতের দেওয়া ওই সাজা স্থগিত হয়।

দেশে ফিরে জোবাইদা রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বাবার বাসায় উঠবেন। মাহবুব ভবন নামে পরিচিত বাড়িটি তার প্রয়াত বাবা সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন। পৈতৃক বাড়িতে জোবাইদাকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিও চলছে। দেশে ফিরে তিনি নিজের অসুস্থ মায়ের সঙ্গে থাকবেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মান বলেন, বাসভবনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি ও সংস্কার কাজ চলছে। বাসার চারপাশে দেয়ালের ওপরে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়াও এসময় বিএনপির চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, বাড়িটি আগে থেকেই ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে, জোবাইদা রহমানের ফিরে আসার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা করেছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন প্রতিবেশীদের অসুবিধার কারণ না হয়। তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের যেন কোনো অশান্তি না হয়। চেয়ারম্যান চান সবকিছু সতর্কতা ও সম্মানের সঙ্গে হোক।

রুম্মান বলেন, মাহবুব ভবনের সামনের দিকে একটি ফুলের বাগান এবং নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট গার্ড রুম রয়েছে।

সশস্ত্র নিরাপত্তা, বাসভবনে পুলিশের উপস্থিতি এবং জোবাইদা রহমানের সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে আর্চওয়ে স্ক্যানার স্থাপনের জন্য গত ৩০ এপ্রিল পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার।

রুম্মান বলেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন এবং তার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার রূপরেখা দিয়েছেন।

জোবাইদা রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরেও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জোবাইদা রহমানের জন্ম বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তিনি প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর মেয়ে। মাহবুব আলী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জোবাইদা রহমানের চাচা।

১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে জোবাইদা রহমানের বিয়ে হয়। ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে তিনি স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন।

বিএনপির সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী জোবাইদা রহমান, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমানকে নিয়ে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি স্থানীয় সময় সোমবার (৫ মে) সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় (লন্ডনের স্থানীয় সময়) হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। দোহায় যাত্রাবিরতির পর মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় তারা ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো একই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে লন্ডন ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালটিতে তিনি ১৭ দিন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি এবং অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে তিনি তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে