এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বউয়ের নির্যাতনে র্যাব-৭ এর সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা প্রাণ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার মা আরতী রানী সাহা।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পলাশের মরদেহ গোপালগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্বজনের কান্না ও আহাজারিতে বাড়ির পরিবেশ ভারি হওয় ওঠে।
ছেলের কপালে চুমু খেয়ে প্রলাপ করছিলেন সন্তান হারা মা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, তোরা আমার বাবার কাছে নিয়ে যা, আমি বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখি। কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেল? এ সময় আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী স্ত্রী সুস্মিতা সাহার বিচারের দাবি জানায় পলাশের পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় র্যাব-৬ এর কমান্ডিং কর্মকর্তা কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে লাশবাহী গাড়িতে করে পলাশ সাহার মরদেহ পিতৃভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পলাশের মরদেহ পৌঁছায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পারকোনা মহাশ্মশানে। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। র্যাবের পক্ষ থেকে মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
গোপালগঞ্জ- পয়সারহাট সড়কে কোটালীপাড়ার তাড়াশী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে পলাশ সাহার বাড়ি। তিনি তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে পালাশ ছিলেন সবার ছোট। বুধবার র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে কর্মস্থলে থাকতেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে থাকেন তার বড় দুই ভাই লিটন ও নন্দলাল।
পলাশের মেজ ভাই নন্দলাল সাহা বলেন, ভাই বোনদের মধ্যে ছোট হওয়ায় পলাশ ছিল সবার আদরের। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে। পাড়াশোনা শেষ করে সাব-রেজিস্ট্রার পদে শুরু করে কর্মজীবন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হন।
চাকরি জীবনে পলাশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭ (র্যাব)- এ বদলি করা হয়। তারপর থেকে পলাশ সেখানে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগে পলাশ ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা সুস্মিতা সাহাকে বিয়ে করেন। বিয়ের ৬ মাস পর থেকেই শুরু হয় পারিবারিক কলহ।
তিনি আরও বলেন, পলাশ চেয়েছিল মা ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তার স্ত্রী এটিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। মা বাসায় না থাকতে চাইলে পলাশ কষ্ট পেত। মা বাসায় থাকলে স্ত্রী সহ্য করতে পারত না। এ নিয়েই মাঝে মাঝে ঝামেলা লেগে থাকতো। ভাই চলে গেল, আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আদরের ছোট ভাই চলে গেল আর সংসারের সবাইকে সাগরে ভাসিয়ে গেল।
নন্দলাল অভিযোগ করে বলেন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
বুধবার (৭মে) দুপুরে চট্টগ্রামের নগরের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এ জন্য নিজের কক্ষে যান পলাশ সাহা। এ সময় সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তাকে। নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পলাশ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে র্যাব কর্তৃপক্ষ। তার রক্তাক্ত মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট ও রিভলবার। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী বলে উল্লেখ করেন।
ওই চিরকুটে আরও উল্লেখ ছিল, আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না, আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।