সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ০৫:৪৩:১১

অবশেষে প্রজ্ঞাপন জারি, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম

অবশেষে প্রজ্ঞাপন জারি, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্য দিয়ে গণহত্যার অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো। 

সোমবার (১২ মে) বিকেলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন এরই মধ্যে হয়ে গেছে। অধ্যাদেশ অনুসারে বিষয়টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের।

এর আগে শনিবার (১০ মে) রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। তখন জানানো হয়েছিল, পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যেহেতু গতকাল বৌদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি ছিল এজন্য আজ প্রথম কার্যদিবসেই জারি হলো প্রজ্ঞাপন। 

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকাকালে নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায়। সবশেষ গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ঘৃণিত হয়। সেই আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই আন্দোলনে পঙ্গু হওয়া হাজার হাজার মানুষ এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পালিয়ে যান ভারতে। এরপর থেকে দলটি কার্যত অস্তিত্বহীন। ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নেতাদের অনেকেই বিদেশে পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। বেশির ভাগ নেতা দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। লাখো কর্মী প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে পরিচয় দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই তাদের। 

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধও ঘোষণা করা হয়। তবে বিএনপিসহ কোনো কোনো দল এবং সরকারের মনোভাব ছিল- কোনো দল আইন করে নিষিদ্ধ না করা। তবে গত ৭ মে গভীর রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নতুন করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা আবার এই দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে দুই দিন আন্দোলন শেষে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানেও আন্দোলন অব্যাহত থাকে। অবশেষে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অনেকটা বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের মতো অন্যতম বৃহৎ দলের কার্যক্রম সাময়িক নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়।  

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে