এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে- এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আগাচ্ছে দলটি। প্রার্থী বাছাইয়ে দলটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এর জন্য ইতোমধ্যে একাধিক জরিপ সম্পন্ন করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতাকে অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
ত্যাগ ও সংগ্রাম: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দেশ ও দলের জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকারকারী প্রার্থী।
সততা ও সুনাম: সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং স্থানীয় জনগণের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ব্যক্তি।
জনপ্রিয়তা: নির্বাচনী এলাকায় ভোটের রাজনীতিতে জনপ্রিয় প্রার্থী।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে, তবে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে একটি চমৎকার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের একাধিক সদস্যও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ ছাড়া, মিত্র দলগুলোর জন্য কিছু আসন ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে যারা বিগত ১৫ বছরের শাসনকালে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের সন্তোষজনক সময় নির্ধারণের পর ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। প্রার্থী বাছাই দলটির জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী অসংখ্য প্রার্থী ইতোমধ্যে গণসংযোগে নেমেছেন। যদিও দলটির হাইকমান্ড উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা জরিপ চালিয়েছে। এখনো জরিপ চলছে।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনের তফশিল ঘোষণার পর দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের পর একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড।
আওয়ামী আমলে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ২০১৪ ও ২০২৪ এর নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করে। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে রাতে ভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে আসে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এটি নিশ্চিত করেছেন, জোর দিয়ে বলেছেন যে ত্যাগী, সৎ, এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অপকর্মে জড়িত বা জনপ্রিয়তাহীন ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাবেন না। ওই নির্বাচনে একটি আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দলের সিদ্ধান্ত হলো একক প্রার্থী নির্ধারণ করা। ২০১৮ সালের মতো একাধিক প্রার্থী হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দলের প্রতি কার কতটুকু ত্যাগ রয়েছে, নিঃস্বার্থভাবে দলকে সেবা করেছেন এবং দুর্দিনে যারা দলের সঙ্গে ছিলেন তাদের আমরা নিশ্চয়ই সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেব। তারেক রহমান কয়েকটি জরিপ করেছেন, আরও করবেন। নিশ্চয়ই যোগ্য ব্যক্তি উঠে আসবে এবং তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলেন, এবার প্রার্থী মনোনয়নে অনেক চমক থাকতে পারে। কিছু আসনে এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী দেওয়া হবে, যার কথা অনেকের চিন্তার মধ্যেও থাকবে না। আবার অনেক সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন টিকিট পাবেন না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্যাগী, সৎ-যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নিতে পারেন। যার বিরুদ্ধে অপকর্মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং মাঠে গ্রহণযোগ্যতা নেই, তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক, ত্যাগ ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী মূল্যায়ন করা হবে।- যুগান্তর