শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ১১:০৪:৩২

২৫ বছর নয়, এবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর যত বছর হলেই

২৫ বছর নয়, এবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর যত বছর হলেই

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি ২৫ বছর নয়, সরকারি চাকরিতে ১৫ বছর পূর্তি হলেই স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া যাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বিধান চালু করা হচ্ছে। আগের বিধান আর থাকছে না। 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ৯.৩ অনুচ্ছেদ-সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হচ্ছে। একই সাথে সরকারি কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক অবসর বা ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) পাঠানোর বিধান বাতিল করার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার।

গত ১৮ জুন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ বাস্তবায়ন বিষয়ক সভা প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের স্মারক নং- ০৩.০৩.২৬৯০.০৯২.১৬.০২৮.১৬.০২৮.২৫.৯৭ নম্বরের চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৫ বছর চাকরি করলে পেনশন-সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ৯.৩ অনুচ্ছেদ-সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৫ বছর পূর্তিতে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেকোনো সময় পরিপত্র জারি করতে পারে বলে জানা গেছে।

গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া হয়। ৫ ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।

নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভার আকার বেঁধে দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এতে সর্বোচ্চ ২৩ মন্ত্রী এবং ১২ প্রতিমন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান ৪৩ মন্ত্রণালয় ও ৬১ বিভাগকে ২৫ মন্ত্রণালয় ও ৪০ বিভাগে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হাতে কোন কোন মন্ত্রণালয় থাকবে, তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে এখনো অনেক সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়নি। প্রথমে ১৫ বছর চাকরি করার পর সব সুবিধাসহ অবসরের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে সুপারিশে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি না করার সুপারিশ করা হয়। আবার কোনো ওএসডি কর্মকর্তাকে কাজ না দিয়ে বেতন-ভাতা দেওয়ার পরিবর্তে তাঁদের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে শিক্ষকতা বা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সাময়িকভাবে পদায়ন করা যেতে পারে। দেশের মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া ইনডেক্স বিশ্লেষণ করে মূল বেতন প্রতিবছর বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে তা ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এ উদ্দেশ্যে একটি স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে উপসচিবদের গাড়ি কেনা ঋণ এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ সুযোগ সচিবালয়ের বাইরে অন্যান্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদের জন্য নেই। এ ব্যবস্থা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়। এতে বৈষম্য দূর হবে এবং সরকারের ব্যয় কমবে। এ ছাড়া শূন্য পদ ছাড়া পদোন্নতি না দেওয়া, প্রশাসনিক ন্যায়পাল নিয়োগ করা, মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানোসহ আরও বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ৯.৩ অনুচ্ছেদ সুপারিশ অনুযায়ী ১৫ বছর পূর্তিতে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মন্ত্রণালয় হবে ২৭টি। এতে দু’জন টেকনোক্রেটসহ মন্ত্রী হবেন ২৩ জন। প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হবেন ১২ জন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব একজন, মুখ্য সচিব ১৭ জন ও সচিব থাকবেন ৪২ জন। একাধিক বিভাগ সংবলিত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়া এবং সমন্বয়ের জন্য একজন মুখ্য সচিব থাকবেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনো কাজ শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ের আপন বিভাগ ও জনবিভাগ থাকবে প্রেসিডেন্টের অধীনে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভ‚ত করার সুপারিশ করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি একজন প্রতিমন্ত্রী রাখার ব্যাপারে প্রস্তাব করেছে কমিশন। এ ছাড়া অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোতে একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকি মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোতে একজন মন্ত্রী থাকবেন।

মন্ত্রণালয়গুলোকে সমপ্রকৃতির পাঁচটি গুচ্ছে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিধিবদ্ধ প্রশাসনে থাকবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, ভ‚মি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদ, পররাষ্ট্র এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যে থাকবে অর্থ, পরিকল্পনা, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগে থাকবে যোগাযোগ, নৌপরিবহন, অসামরিক বিমান চলাচল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, গণপূর্ত ও নগরায়ণ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কৃষি ও পরিবেশে কৃষি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পানিসম্পদ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু এবং শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন সংস্কারে স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এই স্থায়ী কমিশনের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, সংস্কার বাস্তবায়ন প্রস্তাব সরকারের কাছে উপস্থাপন এবং তা বাস্তবায়নে সরকারকে ক্রমাগত কারিগরি সহায়তা দেওয়া। এ লক্ষ্যে স্থায়ী সংস্কার কমিশন প্রথমেই সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। দ্বিতীয়ত, সময় স্বল্পতার কারণে এই কমিশন যেসব সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করতে পারেনি, সেগুলো এবং অন্যান্য নতুন নতুন উদ্ভাবনী সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত স্থায়ী সংস্কার কমিশন কাজ করতে পারে। সরকারি বিভাগের/দপ্তরের জনবলের যৌক্তিকীকরণ এবং সরঞ্জামের তালিকা হালনাগাদ করা দীর্ঘদিনের মুলতবি বা অনিষ্পন্ন কাজ। সরকারি বিভাগ ও দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি করপোরেশন ও কোম্পানির পুনর্গঠনসহ সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বা কাঠামোগত সংস্কার, যেমন বিলুপ্তি, একত্রীকরণ, বেসরকারিকরণ নিয়েও প্রস্তাবিত স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়ন কমিশন কাজ করতে পারে। এই কমিশন পাঁচ কমিশনার নিয়ে গঠিত হতে পারে, তাদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রস্তাবিত এই কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির পদমর্যাদার, চারজন কমিশনার হবেন সরকারের মুখ্য সচিবের পদমর্যাদার।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে