শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫, ১০:৪১:০৫

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর, অনুমোদন যে সংশোধন প্রস্তাব

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর, অনুমোদন যে সংশোধন প্রস্তাব

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সরকারি কর্মচারীদের তীব্র আপত্তি ও আন্দোলনের মুখে কিছুটা ‘নমনীয়’ হয়ে ‘সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ-২০২৫’-এ সংশোধনী আনল সরকার। নতুন সংশোধনীতে বিতর্কিত ৩৭ (ক) ধারাটি বাতিল করা হয়েছে। 

ফলে অনুপস্থিত, উসকানি ও প্ররোচনার অভিযোগে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। নতুন বিধান অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই ব্যক্তিগত শুনানিতে ডাকতে হবে, তদন্ত নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করতে তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি এবং তাতে নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চাকরি অধ্যাদেশের সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৫ মে সরকার সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ধারা ৩৭-এর পর নতুনভাবে ৩৭ (ক) ধারা সন্নিবেশিত করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশে ১৯৭৯ সালের মার্শাল ‘ল’ অর্ডিন্যান্সের অনুরূপ কিছু কঠোর বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সাত দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুতির বিধান। কোনো অফিস প্রধানের কথা না শুনলে নৈতিকমান সম্পন্ন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনানুগত্যের অভিযোগ এনে চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়। শুধু কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বা বিরত থাকতে উসকানি বা প্ররোচিত করার অপরাধে চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়। এ ছাড়া কর্মস্থলে উপস্থিত অথবা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করার জন্য চাকরিচ্যুতি করা যাবে—এমন বিধান রাখা হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের এ আইনের সংশোধনী অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই ব্যক্তিগত শুনানিতে ইচ্ছুক কি না, তা নোটিশে উল্লেখ করতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেখানে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এই কমিটি তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির ১৪ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে, ব্যর্থ হলে তা কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে গণ্য হবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সর্বশেষ কোনো কর্মচারীকে দণ্ড প্রদান করা হলে তিনি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করার অধিকার পাবেন।

গত ২৫ মে আইনটির সংশোধনী অধ্যাদেশ জারির পর সচিবালয়ে প্রায় মাসব্যাপী আন্দোলন চলে। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ব্যানারে এই আন্দোলনে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৪ জুন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আন্দোলনরত সব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্মচারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। সর্বশেষ ২৬ জুন এক পর্যালোচনা সভায় অধ্যাদেশে সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গতকাল উপদেষ্টা পরিষদ আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বাংলাদশে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘নতুন অধ্যাদেশে চারটি ধারা নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল। মুখ্য যে ধারাটিতে আপত্তি ছিল, সেটি সরকার সংশোধন করেছে, এজন্য প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদকে ধন্যবাদ জানাই।’ নবম পে স্কেল, রেশনিং ব্যবস্থা, মহার্ঘ ভাতাসহ আরও যেসব দাবি রয়েছে, সেগুলো সরকার মেনে নেবে এমনটি আশা তার।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম এই সংশোধনীকে ‘মন্দের ভালো দিক’ মন্তব্য করে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনটি মূলত সামরিক শাসনামলের বিতর্কিত ও কালো কানুন বাতিলের জন্য ছিল। সরকার আমাদের আপত্তিগুলোকে বিবেচনায় এনে সংশোধন করেছে এবং সরকারের বোধোদয় হওয়ায় সারা দেশের ১৮ লাখ কর্মচারীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।’

এদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পারমাণবিক জ্বালানি এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির ‘জয়েন্ট কনভেনশন অন দ্য সেফটি অব স্পেন্ট ফুয়েল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড দ্য সেফটি অব রেডিওঅ্যাকটিভ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’-এ স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে