এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশের আকাল চলছে। হতাশা নিয়েই নদী থেকে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। অল্প কিছু মাছ ধরা পড়লেও দাম আকাশচুম্বী। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ইলিশ। আহরণ কম হলেও জেলার ২৫টি ঘাটেই হালি বা পিস অনুযায়ী ইলিশের নিলাম বা ডাক ওঠে। কেজি দরে কখনো বিক্রি হয়নি ইলিশ।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য বিভাগ প্রতি বছর ২৩-২৪ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন দেখায়। ‘অফিসে বসে’ কর্মকর্তারা ‘অনুমান নির্ভর তথ্য’ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
ঘাটের জেলে-আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, কোনো সরকারি-বেসরকারি গণনাকারীকে কখনো কোনো ঘাটে দেখেননি তারা। এর পরও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার বক্তব্য, উৎপাদন তথ্য সংগ্রহে ১২টি ঘাটে গণনাকারী রয়েছে।
আড়তদার আলমগীর মোল্লা, জুলফিকার ও জেলে আলী আহমেদ, আক্কাস, রবিউলসহ কয়েকজন জানান, নদীতে ইলিশ খুবই কম। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা সংরক্ষণে বছরে আড়াই মাস নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এর পরও নদীতে ইলিশ বাড়েনি। এক একটি নৌকা সারাদিন জাল মেরে ৪-৫টি থেকে বড়জোর ৮-১০টি ছোট ইলিশ পাচ্ছে। ইলিশ উৎপাদন কম বলেই দাম বাড়ছে। ইলিশ শিকার করলেও তাদের পাতে জোটে না। ইলিশ বাড়লে জালেও বেশি ধরা পড়ত, দামও নাগালের মধ্যে হতো।
‘এসি রুমে’ বসে মনগড়া হিসেবে প্রকৃত তথ্য আড়াল করছে মৎস্য বিভাগ। মাঠপর্যায়ে কোনো তথ্যই কেউ সংগ্রহ করছে না।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, লক্ষ্মীপুরে গত বছর (২০২৩-২৪) ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার টন। মাছঘাট রয়েছে ২৫টি। এতে প্রতিদিন জেলায় ৮২ টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। ২৫টি ঘাটের প্রতিটিতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ টন বা সাড়ে ৩ হাজার কেজি ইলিশ উৎপাদন হয়।
কিন্তু ঘাটের ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতিটি ঘাটে জেলেরা নদী ও সাগর থেকে এসে ঘাটের আড়তদারদের বাক্সে মাছ রাখে। এরপর উন্মুক্ত নিলামে হালি (৪টি) হিসেবে ইলিশ বিক্রি হয়। ইলিশের আকালের কারণে প্রতিদিন সবগুলো ঘাটে ২০ টন ইলিশও পাওয়া যায়নি।
কটরিয়া ঘাটের বৃদ্ধ জেলে সালেহ আহম্মদ বলেন, মৎস্য বিভাগ হয়তো ঢাকা-চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও কক্সবাজারের ইলিশের ওজন হিসাব করে সারা দেশে আনুমানিক উৎপাদন তথ্য দেয়। সেখানেও সমস্যা আছে। সব মাছ মোকামে যায় না। হিসাব করতে হবে ঘাট থেকেই। নদীতে ইলিশ নেই। জাল ফেলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা।
কটরিয়া মাছঘাটের আড়তদার আলমগীর মোল্লা বলেন, ইলিশের নিলাম ডাক হালি হিসেবে করা হয়। সব ঘাটেই একই নিয়ম। গত ১১ বছর কখনো কাউকে হিসাব নিতে দেখিনি।
জুলফিকার বেপারি বলেন, জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুমাননির্ভর। বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে মাছ ক্রয় করে চাঁদপুরে বিক্রি করি। কখনো কোনো কর্মকর্তা বা গণনাকারীকে ঘাটে এসে ইলিশের হিসাব নিতে দেখিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, জেলায় ২৫টি মাছঘাট আছে। এর মধ্যে সদর, রামগতি, কমলনগর এরূপ ১২টি বড় মাছঘাটে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে ১২ জন গণনাকারী রয়েছেন। প্রতি সন্ধ্যায় তারা মৎস্য অফিসে ইলিশ আহরণের হিসাব পাঠান। এর মাধ্যমেই মৎস্য বিভাগ ইলিশ উৎপাদনের হিসাব করেন। সাত বছর ধরে একইভাবে উৎপাদন হিসাব নির্ণয় করা হয়। ২০২৩-২৪ মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার টন।