বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ০৬:১৮:৩৩

কমতে কমতে এবার ডিমের দর কত হলো জানেন?

কমতে কমতে এবার ডিমের দর কত হলো জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দর পতনে পোলট্রি খাতের হাজার হাজার প্রান্তিক খামারি সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। একইভাবে অকল্পনীয় লোকসানের মুখে পড়েছে এক দিন বয়সি বাচ্চা উৎপাদন কারী হ্যাচারিগুলোও। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ব্রয়লার মুরগি ও লেয়ার মুরগির ডিমের তীব্র দর পতনের কারণে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র খামারি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের খামারগুলোতে প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ৭ টাকা এবং প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১১০ টাকায় নেমে এসেছে, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম। একইভাবে জুনের শেষ সপ্তাহে, প্রতিটি এক দিনের ব্রয়লার বাচ্চা ৮ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, যা হ্যাচারিগুলির জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমার কারণে খামারিরা নতুন করে খামারে বাচ্চা তুলতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। যে কারণে এক দিন বয়সি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দামও তলানিতে ঠেকেছে। ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ও দাম বাড়লে আবার খামারে বাচ্চা তুলবেন বলে জানিয়েছেন খামারিরা। পোলট্রি খাতের স্থানীয় পর্যায়ের ডিলারদের মতে, বাজারে মুরগির দাম বাড়লেও কেবল বাচ্চার দামও বাড়তে পারে, তা ছাড়া দামের পরিবর্তন হবে না।

এমন পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে এক দিনের বাচ্চা উৎপাদন কারী কোম্পানিগুলি শত শত কোটি টাকা লোকসান গুনছে। বাচ্চা উৎপাদন ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, দাম বাড়ার সময়ে, প্রায়শই তাদের ওপর সিন্ডিকেট গঠনের দোষারোপ করা হয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, যদি সিন্ডিকেট করে  উৎপাদন এবং দাম নিয়ন্ত্রণ করা যেত, তাহলে সিন্ডিকেট দাম এত কমতে দিত না। বরং চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমিয়ে সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দিত। মূল্য যদি ঘাটতির সময় বাড়ে এবং অতিরিক্ত উৎপাদন ের সময় কমে, তাহলে এটি স্পষ্ট হয় যে বাজারব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক। তীব্র দর পতনের কারণে গত দুই মাসে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে অনেক খামারি তাদের খামার চালিয়ে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

রাজশাহীর পবা থানার আলীমগঞ্জ সেন্টারপাড়ার জান্নাতুল ফেরদৌসী (৩৮) জানান, তিনি অতি গরম, রানিক্ষেত রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বোপরি নজিরবিহীন মুরগির দর পতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব প্রায়। বর্তমানে ব্যাপকভাবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এতে খামার চালিয়ে খরচ উঠছে না, বরং লোকসানে ডিম ও মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঋণের বোঝা।

রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গার ২২ বছরের পোলট্রি ব্যবসায় মো. মামুনুর রশিদ (৩৮) বলেন, গত কয়েক মাসের টানা লোকসানের বোঝা বয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, আগে ৮০ টাকা দরে বাচ্চা কিনেও ব্যাচ শেষে ভালো লাভ হয়েছে, কিন্তু এখন পাঁচ-সাত টাকা দরে বাচ্চা কিনেও মুরগি উৎপাদন ের খরচ তোলা যাচ্ছে না।

গোদাগাড়ী উপজেলার সাধুর মোড় এলাকার তরুণ মো. জিয়ারুল ইসলাম তার ৪ হাজার ২০০ লেয়ার মুরগি খামার থেকে সম্প্রতি সাড়ে সাত টাকা দরে ৩ হাজার ৩০০ ডিম বিক্রি করেছেন। যার প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ টাকা। যখন খামার থেকে ১১ টাকা দরে ডিম বিক্রি করা গেছে তখন লাভ হয়েছে জানিয়ে জিয়ারুল বলেন, শিগিগরই ডিম ও মুরগির বাজার দর না বাড়লে অনেকেই খামার গুটিয়ে ফেলবেন।

২০ বছর ধরে পোলট্রি শিল্পে সম্পৃক্ত গোদাগাড়ীর মইশাল বাড়ির আব্দুল জলিল (৪৪) টানা লোকসানের মুখে সম্প্রতি নিজের লেয়ারের খামারটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তার ৭ হাজার ব্রয়লার মুরগির শেডেও রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬০০ মুরগি। গেল কোরবানির আগে ১ হাজার ৭০০ ব্রয়লার বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা লোকসান গুনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে মাসে ৭০ হাজার ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি করতাম তা ৪৮ হাজারে নেমে এসেছে। আমার তত্ত্বাবধানে থাকা ৫০টি খামারের মধ্যে লোকসানের কারণে ৩৫টিই বন্ধ হয়ে গেছে।’

এই ধরনের মূল্য প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী ব্যাখ্যা করে বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হয়। অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে দরকষাকষি হয় যাকে বলা হয় বাজারের অদৃশ্য হাত। যদি পোলট্রি বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকত, তাহলে কেন তারা এ ধরনের দর পতনে সম্মত হবে? যে কারণে তাদের সদস্যদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। সিন্ডিকেট কর্তৃক মূল্য হেরফের করার অভিযোগ প্রায়শই কোনো প্রমাণ এবং তদন্ত ছাড়াই করা হয়, তিনি আরো বলেন যে, বাজারে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সরকার রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারে এবং করা উচিত।

পোলট্রি শিল্পের উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথ বোঝাপড়া এবং সহায়তার অভাবের অভিযোগ করে বলেন, ভিত্তিহীন সিন্ডিকেটের অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে বাংলাদেশের প্রোটিনের প্রধান উত্স পোলট্রি শিল্পকে সহায়তা প্রদান করা উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যখন দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং শিল্পের ক্ষতি হয়, তখন খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ পরবর্তী সময়ে অনেক কৃষক এবং কোম্পানি উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে অনিবার্যভাবে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ভোক্তাদের পোলট্রি পণ্যের জন্য অনেক বেশি দাম দিতে হবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে