রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৩২:১৮

বড় সুখবর ৫০ লাখ প্রবাসীর জন্য, এবার যে উদ্যোগ

বড় সুখবর ৫০ লাখ প্রবাসীর জন্য, এবার যে উদ্যোগ

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে এই ভোট গ্রহণ করবে। 

এজন্য প্রবাসীদের ভোট গ্রহণ ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভোটিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। ইসির আশা, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।

তবে প্রস্তাবনায় সমন্বয়হীনতা, অস্পষ্টতা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। বিদেশে অবস্থানরত মোট ভোটারের সংখ্যা উল্লেখ থাকলেও কতজনের ভোট গ্রহণ করা হবে এবং কোন কোন দেশ থেকে ভোট হবে, তা স্পষ্ট নয়। বিদেশে ভোট গ্রহণে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহযোগিতার বিষয়েও নির্দিষ্ট তথ্য নেই।

প্রকল্পের প্রস্তাবনা ও খরচ: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভোটিং সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২৪ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য—প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ভোটিং (আইটি সাপোর্টেড) ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও উন্নয়ন, দেশের অভ্যন্তরে প্রযোজ্য ভোটারদের জন্য একই ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং অনলাইন ভোটিং পদ্ধতি তৈরি করে নিরাপত্তা, ব্যবহারযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ, এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদেশে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা বাস্তবায়নে ইসি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভোট গ্রহণ পদ্ধতি: ইসি ডাক বিভাগের সহযোগিতায় পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেবে। এজন্য ডিজিটাল ভোটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে, যেখানে প্রবাসীরা মুখের ছবি ও এনআইডি যাচাই করে ভোটার হবেন। 

এরপর ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হবে এবং কিউআর কোড, ওটিপি ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা থাকবে। ভোটাররা ব্যালটে পছন্দমতো প্রতীক চিহ্নিত করে ফেরত খামে ভরে হলোগ্রাম স্টিকার দিয়ে সিল করে নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দেবেন। পরে ডাক বিভাগ ব্যালটগুলো ইসিতে ফেরত পাঠাবে, সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে যাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি: গত ৪ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্প প্রস্তাবে অস্পষ্টতা, খরচের যৌক্তিকতা এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম। সিদ্ধান্ত হয়, প্রস্তাবটি সংশোধন করে পুনর্গঠন করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, কোন দেশ থেকে ভোট গ্রহণ এবং কতজন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হবে, তা প্রস্তাবে নেই। সময় অঞ্চলের পার্থক্য এবং ভোটের সময়সূচি নিয়েও কোনো স্পষ্টতা নেই। বিদেশে ভোটের জন্য কূটনৈতিক সমন্বয়, বিশেষ করে বিদেশি সরকারের অনুমতি ও দূতাবাসের সহযোগিতা অপরিহার্য হলেও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা প্রস্তাবে উল্লেখ নেই। খরচের প্রাক্কলনেও অসংগতি আছে।

ইসির বক্তব্য: আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি আনা হয়েছে, তবে প্রস্তাবে বেশ কিছু অস্পষ্টতা আছে। পিইসি সভার আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধন করে পাঠালে অনুমোদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ইসির পরিকল্পনা উন্নয়ন ও গবেষণা বিভাগের উপপ্রধান মুহম্মদ মোস্তফা হাসান বলেন, ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটারের ভোট গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পিইসি সভার কার্যবিবরণী পাওয়ার পর ডিপিপি সংশোধন করে পাঠানো হবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, কতজন ভোট নেবে বা কবে ভোট হবে, তা ডিপিপির বিষয় নয়। প্রবাসীদের সচেতন করা ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহায়তা লাগবে না, তবে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে। পোস্টাল ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনার দায়িত্ব ডাক বিভাগ পালন করবে। প্রথমবার শুরু হওয়ায় অংশগ্রহণ কম হতে পারে, তবে আরপিও সংশোধনের কাজ চলছে এবং সব ঠিক থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সময়োপযোগী ও ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে নিরাপত্তা, সময়মতো ব্যালট পৌঁছানো, পরিচয় যাচাই ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা বড় চ্যালেঞ্জ। পোস্টাল ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনার জন্য দীর্ঘ সময় লাগে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি ও ডাক বিভাগের সমন্বয় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ জরুরি। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ এবং ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ সংশোধন প্রয়োজন হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে