মাহির কাইয়ুম, ঢাবি প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে চিহ্নিত ছাত্রলীগ নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদারের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ঘটনায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার তিনি ডাকসু নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং অফিসার ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
এদিকে সিজার ২০১৯ এর ডাকসু নির্বাচনে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগ মনোনীত জিএস প্রার্থী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র হামলা, ভোটে বাধা এবং শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক প্রার্থী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ ব্যতীত অন্য প্রার্থীদেরকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া এবং এস এম হলে কৃত্রিম লাইন তৈরি করে ভোটারদের ভোটদানে বাধা প্রদানের নেতৃত্বে ছিলেন সিজার। এছাড়া একই নির্বাচনে হল সংসদের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদকে মারধর করে কানে জখম করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মশিউর আমিন শুভ বলেন, “তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় ফরিদ ভাইকে হলে তোলার চেষ্টা করলে আমাদের ওপরও সিজার বাহিনী হামলা চালায়। সেই হামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং বর্তমান ছাত্রদল নেতা মাহমুদসহ অনেকে আহত হন।”
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের পর এস এম হলে হামলার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে গেলে সিজারের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ওপর পুনরায় হামলা চালানো হয়।
২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনীত জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক বলেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমি। তখন হল সংসদে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলো ফরিদ। ফরিদকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছিলো ছাত্রলীগ, তার নেতৃত্বে ছিলো এই জুলিয়াস সিজার তালুকদার।
তিনি বলেন, এস এম হলে কৃত্রিম লাইন তৈরি করে ভোটদানে বাধা প্রদান করার অন্যতম কারিগর সিজার আমাকে এসএম হলের অভ্যন্তরে ঢুকতে বাঁধাপ্রদান করে। একজন প্রার্থী হিসেবে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণের অধিকার আমার ছিলো সেখানে যে সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে অধিকার হরণ করা হলো সে এবারের ডাকসুতে ভিপি পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হীল বাকী বলেন, “চিহ্নিত এই লীগার এখনো ঢাবি ক্যাম্পাসে কীভাবে ঘুরে বেড়ায়, তা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন।”
এ নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, সিজারের অপরাধের সুস্পষ্ট ডকুমেন্টস থাকা স্বত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক তাকে মনোনয়নের সুযোগ প্রদান শিক্ষার্থীদেরকে যারপরনাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। বিগত ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর উপর হামলাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনাসমূহ তদন্ত করে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, একই সাথে বিভিন্ন হলে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় নাম আসা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরকে কার্যকর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদ মুক্ত ক্যাম্পাস গঠনে ব্যর্থতার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।
অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে জুলিয়াস সিজার তালুকদার বলেন, আমি ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রব্বানীর অনুসারী ছিলাম। তবে ছাত্রলীগে আমার কোনো পোস্ট পদবী ছিল না।
ডাকসুর ফর্ম নিলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা, যে দাবি সাদিক কায়েমেরডাকসুর ফর্ম নিলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা, যে দাবি সাদিক কায়েমের
তিনি বলেন, আজকে আমার নামে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সেসবের লিখিত কোনো অভিযোগ নেই। বরং আমি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও অনেক সময় কথা বলেছি, এক্টিভিটিজম করেছি।
সিজারকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও ডপ্রার্থীরা মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভকারীদের একজন জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ বলেন, প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন স্যারকে জুলিয়াস সিজার তালুকদারের ভোটাধিকার ও প্রার্থীতা বাতিল এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য আগামীকাল দুপুর ১২ টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশন প্রধান ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি।-আমার দেশ