এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে রোজার আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটের তফসিল ডিসেম্বরের শুরুতে ঘোষণা করতে চায় ইসি। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এই কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেন।
ইসি সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন উপলক্ষে ২৪টি বিষয় ২০৭ ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলোরই সুনির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ থাকবে রোডম্যাপে। তবে ভোটগ্রহণ বা তফসিলের চূড়ান্ত কোনো তারিখ এখনো নির্ধারণ করেনি ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসা ও ২৪ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে রোডম্যাপে।
এর উল্লেখযোগ্য অন্য বিষয়গুলো হচ্ছে, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনী আইন-বিধি সংস্কার, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ চূড়ান্তকরণ, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালার অনুমতি প্রদান, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইন-বিধিমালার সংশোধনী একীভূতকরণ এবং ম্যানুয়েল নির্দেশিকা প্রণয়ন, পোস্টার ও পরিচয়পত্র মুদ্রণ, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনী দ্রব্যাদির ব্যবহার উপযোগীকরণ, নির্বাচনী বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচার, পোস্টাল ভোটিং ও বিবিধ।
অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ: নির্বাচনকেন্দ্রিক আট শ্রেণির অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকসহ অংশীজনের সঙ্গে এ সংলাপ সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। শেষ হতে সময় লাগবে দেড় মাস।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ: ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যা চূড়ান্ত করা হবে ৩১ আগস্ট। আর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ নভেম্বর। এজন্য খসড়া প্রকাশ হবে ১ নভেম্বর।
নির্বাচনী আইনবিধি : সব আইনবিধি ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশোধনের প্রস্তাব ও প্রণয়ন করা হবে।
এছাড়া সংসদী আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত, দেশি, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা চূড়ান্ত, নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) ২০২৫ প্রতীকসহ, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯; এগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা রয়েছে ইসির।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন : ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
সীমানা নির্ধারণ : সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করবে ইসি। আর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে তারা।
অন্যান্য বিষয় : রোডম্যাপে আরও যেগুলো থাকছে তার মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিবন্ধন ২২ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত করে ১৫ নভেম্বর নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমতি প্রদানে যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করা হবে ১৫ নভেম্বর মধ্যে।
এদিকে ১৫ নভেম্বর মধ্যে নির্বাচনী তথ্য প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, টিএন্ডটি, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সঙ্গে সভা করবে ইসি। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিংয়ে যোগদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। নির্বাচনী ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, পোস্টার ইত্যাদি মুদ্রণ শেষ করা হবে ১৫ সেপ্টেম্বর মধ্যে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ২৯ আগস্ট থেকে ভোটগ্রহণের ৪ থেকে ৫ দিন আগে যাবতীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষ করবে ইসি। নির্বাচনের সব ধরনের মালামাল সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম শেষ করা হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। ব্যবহার উপযোগী স্বচ্ছ ব্যালট চূড়ান্ত করা হবে ৩০ নভেম্বর মধ্যে। ১৫ নভেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেটে চূড়ান্ত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অনূকূলে অর্থ বরাদ্দের জন্য বৈঠক ১৬ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর মধ্যে।
নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে চায় ইসি। এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম সভা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
৩১ অক্টোবরের আইসিটি সংক্রান্ত সকল কাজ শেষ করতে চায় কমিশন। ইসি সচেতনতামূলক প্রচার কাজ শেষ করতে চায় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। টেলিযোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখা, ফলাফল কিভাব প্রকাশ ও প্রচার করা হবে, বেসরকারি ফলাফল প্রচার সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্ধারণ এবং ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।