শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০৫:২৫

হঠাৎ চালের দাম বস্তায় ১০০টাকা পর্যন্ত কমেছে

হঠাৎ চালের দাম বস্তায় ১০০টাকা পর্যন্ত কমেছে

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বিদেশ থেকে আমদানির কারণে চালের বাজারে পাইকারি পর্যায়ে কিছুটা দাম কমলেও খুচরা পর্যায়ে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি। খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। 

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা চাল পুরোপুরি বাজারে আসলে চালের দাম কমতে পারে। মিলমালিকরাও দাম কমার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও এলাকার বড় পাইকারি ব্যবসায়ী জনতা রাইস এজেন্সির সোহরাব হোসেন।

রনি রাইস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারি মনিরুল ইসলামও জানিয়েছেন, মাঝারিজাতের পাইজাম চালের দাম বস্তায় ১০০টাকা পর্যন্ত কমেছে। চালের দাম আরো কমতে পারে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ইন্ডিয়ান নাজিরশাইল কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কমে ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫০টাকা, পাইজাম চাল ২৮৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধচালের দাম কিছুটা নিম্নমুখি হওয়ার ইঙ্গিত থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের আতপ চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাবুর্চি ও ফারুক আতব চাল বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০টাকা এবং বিভিন্ন কর্পোরেট ব্যান্ডের আতব চাল বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন।

বেনাপোল স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ভারতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ওইভাবে চাল আমদানি হচ্ছে না। যেখানে চার থেকে পাঁচ হাজার টন চাল আমদানি হওয়ার কথা সেখানে বুধবার মাত্র ২৫০ টন চাল বেনাপোল বন্দর দিয়ে ঢুকেছে। যেহারে চাল আমদানি হওয়ার কথা ছিল সেটা হচ্ছে না, ফলে আমদানির প্রভাব নেই দেশের চালের বাজারে। তবে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের নাজমুল হক আমার দেশকে বলেন, আমদানির পর দিনাজপুরে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম আরো কমতে পারে।

এদিকে আইপির অনুমতি বন্ধ থাকায় হিলি ও বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পেঁয়াজের বাজারে কোনো প্রভাব নেই। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে ভারত থেকে আমদানির খবরে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬টাকা পর্যন্ত কমলেও চলতি সপ্তাহে ফের বাড়ছে। বৃহস্পতিবার কেজিতে ২টাকা বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মাহফুজ। পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে শ্যামবাজারে আমদানি পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি, ফলে দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ৪দিনে খুবই সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, এরপর আবার দেশি পেঁয়াজের চেয়ে আমদানি পেঁয়াজের দাম বেশি এতে খুচরা বিক্রেতারাও এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে আড়ত ঘুরে দেখা গেছে পাইকারি পর্যায়ে দেশি ভালোমানের পেঁয়াজ ৭৬ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরাবাজারে দেশি ভালোমানের পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫টাকা কেজি দরে।

বৃহস্পতিবার বিকালে চাঁদপুর রাইস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া বলেন, চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখছিনা। মিলমালিকরা উঁৎপেতে বসে আছেন আমদানির অনুমতি বন্ধ হলেই তারা চালের দাম আবারো বাড়ানোর জন্য। তার মতে, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমদানি বাড়িয়েও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এ জন্য সরকারের উচিত বেশি আমদানির পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়ে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা।

একই এলাকার খুচরা বিক্রেতা ইমাম উদ্দিন বাবলু বলেন, আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে; চালের দাম কমেনি। কমারও কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

এদিকে সব ধরনের সবজি আগের সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের শেষ- এ কারণে সরবরাহ কমে সবজির চাহিদা বেড়েছে। সবজির দাম প্রতিদিনই ব্যাপক উঠানামা করছে। সবজির বাজারে আলু আর পেঁপের দামই একটু কম, অন্য সব সবজি নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পেঁপে আলু ছাড়া ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি কাঁচা মরিচের দাম কমে ১০০ থেকে ১২০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির অতিরিক্ত দামের কারণ জানিয়ে কারওয়ানবাজারে সবজি বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, পাইকারি বাজারে আমাদের অতিরিক্ত দামে সব সবজি কিনতে হচ্ছে। বেশিরভাগ সবজির মৌসুম এখন শেষ, নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারে সবজির বাজারে আগের সপ্তাহের মতো বাড়তি দামের চিত্রই লক্ষ করা গেছে। বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারের প্রতি কেজি পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, আলু ২০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, করোলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৮০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা, বেগুন (গুল) ১২০টাকা, বেগুন (লম্বা) ৮০-৯০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০টাকা, কঁচু প্রতি কেজি ৬০ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা কমে ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া মহল্লার দোকানের ১৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ এক হাজার ২০০টাকা। এছাড়া সব ধরনের মাছ বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বৃহস্পতিবারের খুচরা বাজারদরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়- চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও আটা (খোলা), সয়াবিন তেল (২লিটার বোতল), পাম অয়েল লুজ, সুপার পাম অয়েল লুজ, মসুর ডাল (ছোট), লবঙ্গ, এলাচ, চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে রসুনের দাম কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবার বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং শিক্ষা খরচ বৃদ্ধি এই দুই বিষয়কে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ পরিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াকে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছে। ৬৪ দশমিকজ ৫৫ শতাংশ পরিবার সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত এবং ৫২ দশমিক ০১ শতাংশ পরিবার সরাসরি শিক্ষা খরচ বাড়ার বিষয়টি দুশ্চিন্তার কারণ বলে উল্লেখ করেছে।

দেশের আট হাজারেরও বেশি পরিবারের অংশগ্রহণে পরিচালিত এ জরিপটি বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা ও শাসনব্যবস্থার চ্যালেঞ্জের একটি সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে