চম্পক কুমার : মফস্বলের ছোট্ট একটি গ্রামের নাম হানাইল। এখানকার মাটি, বাতাস আর গ্রামীণ শিক্ষার আলোয় বড় হয়েছেন মুহা. মহিউদ্দীন খান নামের এক তরুণ। হানাইলের স্বপ্নযাত্রা মেধাবী এই তরুণ আজ দেশের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নির্বাচিত হয়ে লিখেছেন ইতিহাস। তিনি উচ্ছ্বসিত করেছেন শেকড়ের বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, সহপাঠী ও গ্রামবাসীদের।
হানাইল নামে ছোট্ট এই গ্রামটি জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নে অবস্থিত। এই গ্রামের খানপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল মাবুদ খানের কনিষ্ঠ ছেলে মুহা. মহিউদ্দীন খান। তিনি হানাইল নো’মানিয়া কামিল মাদরাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিলে ও ২০১৮ সালে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে একের পর এক কৃতিত্বের নজির গড়েন।
গ্রামবাসী ও হানাইল নো’মানিয়া কামিল মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল মাবুদ খানের তিন সন্তানের মধ্যে ডাকসুর নব নির্বাচিত এজিএস মুহা. মহিউদ্দীন খান সবার ছোট। তিনি হানাইল নো’মানিয়া কামিল মাদরাসা থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। একই মাদরাসায় ২০১৮ সালে সাধারণ বিভাগ থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান। সেই বছর আলিম পরীক্ষায় জেলাজুড়ে তিনি একমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ছিলেন। এরপর মেধাবী এই শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-২০১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক। ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে বিপুল ভোটে এজিএস নির্বাচিত হন। এই অবিস্মরণীয় বিজয়ে গ্রামবাসী ও তার প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হানাইল নো’মানিয়া মাদরাসার শিক্ষক ও সহপাঠীরা সবাই উচ্ছ্বসিত হয়েছেন।
ডাকসুর নব নির্বাচিত এজিএস মুহা. মহিউদ্দীনের হানাইল নো’মানিয়া কামিল মাদরাসার সহপাঠী মাকছুরা আখতার মীম বলেন, মুহা. মহিউদ্দীন খান ও আমি প্রথম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত সহপাঠী ছিলাম। সে ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, নম্র ও ভদ্র। এজিএস প্রার্থী হওয়ার পর থেকে আমাদের বিশ্বাস ছিল জিতবে সে। আমাদের মাদরাসার ২০১৬ ব্যাচের একটি অনলাইন গ্রুপ আছে। আমরা মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সবাই গ্রুপে খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম। সহপাঠীর জন্য আমাদের মধ্যে দারুন উত্তেজনা কাজ করছিল। আমরা কাঙ্খিত ফলাফল পেয়েছি। মহিউদ্দীন ডাকসুর এজিএস নির্বাচিত হওয়ায় আমরা ২০১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গর্বিত।
হানাইল গ্রামের বাসিন্দা মিলন হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নির্বাচিত এজিএস মুহা. মহিউদ্দীন খান আমাদের গ্রামের সন্তান। আমরা তার এমন কৃতিত্বে গর্বিত।
হানাইল নো’মানিয়া কামিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মো. ফজলুল হক ও আরবি বিষয়ের প্রভাষক মো. সাইদুর রহমান বলেন, মহিউদ্দীন খান আমাদের ছাত্র ছিল। তাকে ছোটবেলা থেকে আলিম পাস করা পর্যন্ত পড়িয়েছি। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ডাকসুতে জয়ী হয়ে মহিউদ্দীন প্রমাণ করেছে যে, মফস্বলের ছাত্ররাও পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে জায়গা করে নিতে পারে। সে আরও সাফল্য অর্জন করুক, তার জন্য দোয়া করি।
হানাইল নো’মানিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও: মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম বলেন, মুহা. মহিউদ্দীন খান আমাদের মাদরাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের এজিএস নির্বাচিত হয়েছে। হানাইল নো’মানিয়া কামিল মাদরাসার প্রাক্তন কোনো শিক্ষার্থী এই প্রথম ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এজিএস পদে বিজয়ের মুকুট অর্জন করেছেন। এটি জয়পুরহাট জেলাতেও প্রথম। তার এমন কৃতিত্বে আমরা শিক্ষাকরা গর্বিত।-ঢাকা পোস্ট