এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দামে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। গড়ে প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বেশির ভাগ সবজির দাম। বিপরীতে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দামে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। গড়ে প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বেশির ভাগ সবজির দাম। বিপরীতে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। একদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫ টাকা। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে কিছুটা হলেও বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। অন্যদিকে মাছের বাজার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা কয়েক সপ্তাহের ঊর্ধ্বগতির পর সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। মৌসুমি সবজি সরবরাহ বাড়তে শুরু করায় দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরায় দাম কমছে ধীরে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, লেবু হালি বিক্রি হচ্ছে মান ও জাতভেদে ২০-৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের তুলনায় গড়ে ১০-২০ টাকা কম। কাঁচামরিচ এখন ১৫০ টাকা কেজি, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ২০০ টাকার কাছাকাছি। টমেটো ১০০-১১০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। শসা ৬০-৮০ টাকা, গাজর ৯০-১০০ টাকা, এখানে তেমন পরিবর্তন হয়নি।
ধনিয়া পাতা ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। করলা ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে গত সপ্তাহে দাম ছিল ৮০-৯০ টাকা। ঢেঁড়স ও পটোল দুটিই এখন ৬০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৮০ টাকা। বেগুনের বাজারেও কমতির প্রভাব পড়েছে। লম্বা বেগুন ৭০-৮০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১০০-১২০ টাকা। গোল বেগুন ১০০-১১০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০-১৬০ টাকা। চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, আগে ছিল ৭০-৮০ টাকা।
লাউ ৬০ টাকা এবং মিষ্টি লাউ ৫০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহে দাম ছিল যথাক্রমে ৮০ ও ৭০ টাকা। পেঁপে ৩০-৪০ টাকা কেজি, আগে ছিল ৪০-৫০ টাকা। শাকের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। লালশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা এবং কুমড়ার শাক ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও মুরগির বাজারে তার উল্টো চিত্র। ব্রয়লার মুরগির কেজি বর্তমানে ১৮০ টাকা, যা একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগি আগের দাম ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির দামের মতো পেঁয়াজ ও আলুর বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ টাকা এবং আলু ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান সাফায়েত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দাম বেড়ে গেলে আমরাও চাপে পড়ে যাই। কয়েক সপ্তাহ ধরে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি কিনতে পারিনি। ক্রেতারা মন খারাপ করলেও তো কিছু করার নেই। কিনতেই হয়েছে। তবে এ সপ্তাহে কয়েক ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা করে কমেছে, এটা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।’
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল হাই বলেন, ‘মৌসুমি সবজি বাজারে আসতে শুরু করায় সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দামে স্বস্তি এসেছে। বর্ষার শেষ ভাগে আরো সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমতে পারে।’ মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আব্দুল আজিজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এক মাস ধরে সবজির দাম অনেকটা চড়া ছিল। সেই সময়ে কোনো সবজি ৮০ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারিনি। এতে আমরাও বিপাকে পড়েছিলাম, কারণ ক্রেতারা এসে বারবার অভিযোগ করছিলেন। তবে এ সপ্তাহে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। চিচিঙ্গা, কাঁচামরিচ, করলা, ধুন্দল, শিমসহ বেশকিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা কমেছে। এতে বাজার কিছুটা স্বস্তির দিকে যাচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমার সম্ভাবনা আছে।’
অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি দরে উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও খুচরায় তেমনটা দেখা যায় না। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং পরিবহন খরচ এজন্য দায়ী বলে তারা মনে করছেন।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, মৌসুমি সবজির দাম কমলেও পোলট্রি খাতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি মুরগির দামের ওপর প্রভাব ফেলছে। খাদ্যশস্য, ভাড়া, পরিবহন খরচ ও রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা বাধ্য হয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতাদের জন্য স্বস্তি আসছে না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায় এবং সাদা ডিমের ডজন ১২৫ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার খুচরা বাজারে ডজনপ্রতি ডিমের দাম কিছুটা বেশি, সেখানে লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। মাছের বাজারেও স্থিতিশীলতা লক্ষ করা গেছে। মিঠাপানির চাষ করা রুই, কাতলা, তেলাপিয়া ও সরপুঁটির দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। আধা কেজির বেশি বা প্রায় এক কেজি ওজনের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০-৪০০ টাকায়, আর তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা দরে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। মিনিকেটের দাম আগের অবস্থায় আছে। ভালো মানের মিনিকেটের দাম কেজি ৭৪ টাকা। ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ার কারণে মোটা ও মাঝারি চালের দাম কিছুটা কমেছে। ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকার মতো দাম কমেছে, তাতে কেজিতে ২ টাকার মতো কমছে।
কারওয়ান বাজারে বিসমিল্লাহ রাইস ট্রেডার্সের দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পোলাও চালের বাজারটা একটু বেড়ে গেছে। সব ধরনের পোলাও চালের দাম বেড়েছে। পোলাও চালের ২৫ কেজির বস্তার দাম আগে ২ হাজার ১৫০ টাকা থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে তা ২ হাজার ৪৫০ টাকায় ঠেকেছে। অর্থাৎ আগে যে চাল ৮৫ টাকা করে বিক্রি হতো, সেটা এখন ৯৮ টাকা। আর যেসব পোলাও চাল ১০১ টাকা দরে ছিল সেগুলো হয়ে গেছে ১১০ টাকা।’