বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:৪৫:৩৪

এবার ঝটিকা মিছিল হলেই যে ব্যাবস্থা, যে কড়া বার্তা

এবার ঝটিকা মিছিল হলেই যে ব্যাবস্থা, যে কড়া বার্তা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানীর কোনো থানা এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল হলে জবাবদিহি করতে হবে সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের। পরিদর্শকদের থানা থেকে প্রত্যাহারও করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০ থানার ওসি ও পরিদর্শকদের এই কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের সূত্র বলছে, ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গত রোববার রাত ৯টার দিকে বেতারযন্ত্রে ৫০ থানার ওসি ও পরিদর্শকদের উদ্দেশে এই বার্তা দেন। বার্তায় বলা হয়, যেসব থানা এলাকায় ঝটিকা মিছিল হবে, সেই থানার ওসিসহ সবাইকে সে বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। তাঁদের দায়িত্বে অবহেলা ও শিথিলতার কারণে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

ডিএমপি কমিশনার ওই বার্তা দেওয়ার দিনই শেরেবাংলা নগর থানার দুই পরিদর্শককে প্রত্যাহার করা হয়। সূত্র বলেছে, আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ৬০ ফিট ও শ্যামলীতে একাধিকবার ঝটিকা মিছিল হওয়ার কারণে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়। ডিএমপি সদর দপ্তর জানায়, একটি থানায় পরিদর্শক পদমর্যাদার চারজন পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা হলেন ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত), পরিদর্শক (অপারেশনস) এবং পরিদর্শক প্যাট্রল (পিআই)। বার্তায় তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।

ডিএমপির একটি সূত্র বলেছে, ঝটিকা মিছিলের ব্যাপারে বিভিন্ন থানার কর্মকর্তাদের গা ছাড়া ভাব থাকায় ডিএমপি কমিশনার এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। গত রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে একটি সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ভেতরে অনৈক্য বাড়ায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল সুযোগ নিচ্ছে; বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে এই বিভাজন প্রকট হয়েছে। ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ লোক বরগুনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ঝটিকা মিছিলের বিষয়টি পুলিশকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর সেদিন রাতেই ডিএমপি কমিশনার সব থানায় বিশেষ বার্তা দেন।

কয়েকটি থানার কর্মকর্তারা জানান, ডিএমপি কমিশনারের ওই বার্তার পর থানার পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ৫-১০ জন মিলে হঠাৎ কোনো সড়কে বা গলিতে কয়েক সেকেন্ডের মিছিল করলে খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ যাওয়ার আগেই তারা সটকে পড়ে। ফলে তাৎক্ষণিক কিছু করা যায় না। পরে ছবি-ভিডিও দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আবার এক এলাকায় মিছিল করছে অন্য এলাকার লোক। এ কারণে তাদের আটক করাও সহজ হচ্ছে না। তারপরও তাঁরা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের মিছিল যেন না হয়, সেই চেষ্টা করছেন।

ডিএমপি সদর দপ্তর জানায়, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহার আনামের নেতৃত্বে বাড্ডা-রামপুরা প্রধান সড়কে প্রথম মিছিল হয় আওয়ামী লীগের। এরপর কয়েক দিনের ব্যবধানে সাবেক বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও উত্তরায় ঝটিকা মিছিল হয়েছে। জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব মিছিলে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের ২৬৯ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৯ জন, আগস্টে ১১৬ এবং সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৪৪ জন রয়েছেন।

ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মো. তালেবুর রহমান গত মঙ্গলবার ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া ১২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর বলেন, ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন থানা-পুলিশ ও ডিবি গ্রেপ্তার করছে। এই অভিযান চলমান। তবে পুলিশের কারও দায়িত্বে অবহেলা থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে