শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:৫৭:৩৫

মনে বড় কষ্ট নিয়ে ঢাকায় ফিরে গেলেন ফজলুর রহমান!

মনে বড় কষ্ট নিয়ে ঢাকায় ফিরে গেলেন ফজলুর রহমান!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বাড়িতে এসেও শুক্রবার দুপুরে অনেকটা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ঢাকায় ফিরে গেলেন দলীয় পদ স্থগিত রাখা বিপুল আলোচিত বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর রহমান।

এর আগে তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আগে দলের প্রতি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন।

এ সময় তিনি উল্লেখ করেন- দীর্ঘ আট বছর ধরে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে জেলার ১৩টি উপজেলার ইউনিটগুলো নিজ হাতে সাজিয়ে ছিলেন।

কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত দল থেকে তার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়িতে এসেও ঢাকার উদ্দেশে ফিরে যান।

জানা গেছে, অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান চরম দুর্দিনে ২০০৭ সালের দিকে বিএনপিতে যোগদান করেন এবং প্রায় ৮ বছর কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং প্রতিপক্ষ দলের বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি ওই আসনে তার প্রতিপক্ষ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও সরকারের রোষানলে পড়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘ দিন দেশান্তরি থাকতে বাধ্য হন।

প্রকৃতপক্ষে ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনের পর থেকে এলাকার বিপুল জনপ্রিয় নেতা ফজলুর রহমান নিজ নির্বাচনি এলাকায় প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশের সুযোগ পান এবং তার এসব সভা-সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামতে শুরু করে।

এসব সভা-সমাবেশ এবং গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে জামায়াত-শিবির, রাজাকার এবং এনসিপির ব্যাপক সমালোচনা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার এসব বক্তব্য জুলাই আন্দোলনের শরিকদেরও এমনকি গণঅভ্যুত্থানকে স্পর্শ করে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াত-শিবির ও এনসিপির বিরুদ্ধে বিষোদগারের প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক  কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন হতে থাকে।

এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সবপর্যায়ের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয় ২৬ আগস্ট থেকে। এর আগে একই দিন ফজলুর রহমান দলের শোকজের লিখিত জবাব দেন। সেই জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় দল তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়।

দলের ওই পদ স্থগিতের চিঠিতে বলা হয়- গত ২৪ আগস্ট ২০২৫ স্মারকে আপনার নামে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। আপনি কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব না দিয়ে সময় বর্ধিত করার জন্য আবেদন করেন। আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট স্মারকে কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব প্রদানের জন্য পুনরায় ২৪ ঘণ্টার সময় বর্ধিত করা হয়। আপনি ২৬ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশের যে জবাব দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয়।

এতে বলা হয়- ‘তথাপিও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদান বিবেচনা করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আপনার দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সবপর্যায়ের পদ তিন মাসের জন্য নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো।’

চিঠিতে আরও বলা হয়- ‘এখন থেকে আপনি টকশো বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলার সময় দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুণ্ন না হয় এবং দেশের জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে সেই বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকবেন।’

এমন পরিণতি লাভের পরও তিনি তিন-তিনবার নিজ নির্বাচনি এলাকায় এসে সভা-সমাবেশের ডাক দিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক এসব সভা-সমাবেশে অংশ নেন। তার দলীয় পদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

তবে বাড়িতে এসেও শুক্রবার দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে ফিরে যাওয়ার সময় গণমাধ্যম কর্মীরা মুখোমুখি হলে তিনি এ নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে