এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। বহু ব্যাংকে জমা রাখা গচ্ছিত অর্থ তুলতে পারছেন না সাধারণ গ্রাহকরা। পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক কার্যত নামেমাত্র টিকে আছে। দেউলিয়ার পর্যায়ে আছে ১২টি ব্যাংক। অতিমাত্রায় দুর্বল ১৫টি ব্যাংক।
দখল ও লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ পাঁচ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে আগামীতে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে তারল্য সংকট বাড়বে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ব্যাংক খাত নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব শঙ্কার কথা বলেন।
তারা জানায়, লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ পাঁচ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আরও বেড়ে যাবে। এখন কার্যত ১২টি ব্যাংক দেউলিয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। তারা আমানতকারীদের টাকা দিতে পারছে না। ১৫টি ব্যাংক অতিমাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। যার আটটিতেই (অর্ধেকের বেশি) লুটপাট হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএপি) ও জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ ওয়েইডেন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বক্তব্য দিয়েছেন ব্যাংকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধের খসড়া গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম।
বক্তৃতা দেন পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন ও ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেন প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, এস আলম একাই পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর তার সহযোগীরা আরও ধ্বংস করেছেন। এ খাত ঘুরে দাঁড়াতে আরও অনেক সময় লাগবে। ব্যাংক খাতে সংস্কারের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো ইতিবাচক। কিন্তু সংস্কার হলেও রাজনৈতিক সরকার এসে সংস্কারকে আর চলমান রাখে না। পাশাপাশি যেসব সংস্কার সম্পন্ন হয়, সেগুলোরও ধারাবাহিকতা বজায় রাখে না। ফলে ব্যাংক খাতের অবস্থা আগের পর্যায়ে চলে যায় বা আরও অবনতি ঘটে।
বক্তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাত থেকে আওয়ামী লীগ সরকার একটি শক্তিশালী ব্যাংক খাত পেয়েছিল। কিন্তু তারা এর সুফল ধরে রাখতে পারেনি। বরং তারা সংস্কারগুলো আগের অবস্থায় নিয়ে যায়। যার ফলে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে। লুটপাটে ব্যাংক খাত ধ্বংস হয়েছে।
সেমিনারে ব্যাংক খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা আরও বলেন, লুটপাটের টাকা বেশির ভাগই পাচার হয়ে গেছে। যে কারণে সেগুলো আদায়ের সম্ভাবনা নেই। ফলে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বেড়েছে। এ সংকট আরও থাকবে।