রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:৪৩:৩৯

গাড়ি ভাঙচুর ও ফরিদপুরে এ কে আজাদের গণসংযোগে হামলা

গাড়ি ভাঙচুর ও ফরিদপুরে এ কে আজাদের গণসংযোগে হামলা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদের গণসংযোগে হামলার অভিযোগ উঠেছে যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় ১৫টি গাড়িবহরের মধ্যে দুটি গাড়ির কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ কে আজাদ তার গাড়িবহর নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিকেল ৪টার দিকে এ কে আজাদ পরমানন্দপুর বাজারে যান। প্রথমে তিনি পরমানন্দপুর বাজারসংলগ্ন জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বাজার এলাকায় এসে গণসংযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নান্নু মোল্লার নেতৃত্বে একটি মিছিল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। মিছিলকারীরা এ কে আজাদকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যায়িত করে স্লোগান দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরা সবাই কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর-৩(সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নায়াব ইউসুফের অনুসারী।

মিছিলকারীরা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে এ কে আজাদকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করেন। এ সময় মিছিলকারীদের নায়াব ইউসুফের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ওই সময় এ কে আজাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী তাকে ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে যুবদল নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে পুলিশের পরামর্শে এ কে আজাদ ঘটনাস্থল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

বিকেল সোয়া ৫টার দিকে পরমানন্দপুর মাঠে অবস্থান নেওয়া এ কে আজাদের গাড়িবহর পুলিশ প্রহরায় একে একে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তবে শেষের দুটি গাড়িতে আখ দিয়ে আঘাত করে কাচ ভাঙচুর করেন যুবদল নেতাকর্মীরা।

জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে যুবদলের কোনো কমিটি নেই। পরমানন্দপুরে আমাদের কোনো লোক এ ঘটনা ঘটায়নি।

ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, রাজনীতিতে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। গত নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকও এ ধরনের আচরণ করেননি। নায়াব ইউসুফের কাছ থেকে এমন আচরণ এলাকাবাসী প্রত্যাশা করেনি। এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক সংকটকে ঘনীভূত করবে। এ ঘটনার জন্য মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি জানান। 

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফ বলেন, আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমি আমার নেতাকর্মীদের স্পষ্টভাবে বলেছি, এ ধরনের কোনো কাজ না করতে। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি ও পুলিশ সুপারকেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, এ কে আজাদ অনেক দিন ধরেই মাঠে আছেন। কখনো তো কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি যদি জনপ্রতিনিধি হতে চান, তাহলে গণসংযোগ করতে ভয় পাবেন কেন? কেন তাকে পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে যেতে হবে? আমি তো সব জায়গায় যাচ্ছি, আমার তো পুলিশ প্রটেকশনের দরকার হয় না।

নায়াব ইউসুফ বলেন, এ কে আজাদ আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব কথা বলছেন যাতে আমার রাজনৈতিক ক্ষতি হয়। তার বহরে আওয়ামী লীগের পদধারী কিছু নেতা থাকেন, তাদের উপস্থিতি দেখে জনগণের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পরমানন্দপুরে আজ ছিল হাটের দিন। সেখানে এ কে আজাদ গণসংযোগ করতে গিয়েছিলেন। অপরদিকে যুবদলের লোকজনও গণসংযোগ করছিল। একপর্যায়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থায় চলে এলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এ কে আজাদের গাড়িবহর নির্বিঘ্নে পার করিয়ে দেয়।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে এ কে আজাদের বহরে হামলায় নায়াব ইউসুফের নাম জড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে নায়াব ইউসুফ সমর্থিত জেলা ছাত্রদল। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেনের নেতৃত্বে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ শহর ক্যাম্পাস থেকে এ মিছিল বের হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে ছাত্রদলের নেতারা বক্তব্য দেন। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে