সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:৪৬:৫৩

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী এ তথ্য জানান।

ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কার্গো ভিলেজের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কার্যকর ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। 

কার্গো ভিলেজের প্রধান ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা সাধারণত হালকা যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক পণ্য, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, অ্যাক্সেসরিজ এবং নমুনা আমদানি ও রপ্তানির জন্য এই স্থান ব্যবহার করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও তাদের গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র ও পার্সেল আদান-প্রদানের জন্য কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে থাকেন।

তিনি বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই স্থান ব্যবহার করেন। এছাড়া হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, শাকসবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানিকারকরাও কার্গো ভিলেজের ওপর নির্ভরশীল। এই ধরনের পণ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল-সময়মতো বিদেশে না পৌঁছালে তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে, কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড বা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে আমাদের রপ্তানি শিল্প ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা কঠিন। সরাসরি ক্ষতি হয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্যে, তবে এটি কেবল সরাসরি ক্ষতি নয়-পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি না হওয়ায় আরও বড় ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে সামনের কয়েকদিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত থাকবে, বাজারে অবস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে, ক্রেতাদের আস্থা কমবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আমরা আমাদের সদস্যদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা করছি, তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়নি। একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে সামগ্রিক ক্ষতির সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে। তবুও প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা-সব মিলিয়ে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, বিদেশি ক্রেতারা এই অগ্নিকাণ্ডের খবরে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই ঝুঁকি নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার দায় কেউ যেন এড়াতে না পারে-সেজন্য দায়িত্ব অবহেলার শাস্তি হবে কি?

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা জরুরি। গত কয়েক দিনে আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং সর্বশেষ ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ধারাবাহিকতা উদ্যোক্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সদস্য এবং আমদানিকারক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে