সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:২০:০৫

‘এইটা মৃত্যু না, হত্যা, এইটা মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবহেলা, টাকা বা চাকরি দিয়ে এর ক্ষতিপূরণ হবে না’

‘এইটা মৃত্যু না, হত্যা, এইটা মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবহেলা, টাকা বা চাকরি দিয়ে এর ক্ষতিপূরণ হবে না’

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘এইটা মৃত্যু না, হত্যা। এইটা মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবহেলা। টাকা বা চাকরি দিয়ে এর ক্ষতিপূরণ হবে না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই অবহেলায় জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে।’ স্বামীকে হারিয়ে পাঁচ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহকে কোলে নিয়ে আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের ট্র্যাক থেকে খুলে পড়া বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে নিহত আবুল কালামের (৩৫) স্ত্রী আইরিন আক্তার প্রিয়া।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটার বয়স পাঁচ বছর, মেয়ের তিন বছর। বাচ্চা দুটি তাদের বাবাকে হারাল। সেটার ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে?’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আবুল কালাম। দুপুর ১২টার আগে আগে ট্র্যাক দিয়ে মেট্রোরেল চলাচলের মুহূর্তে ওপর থেকে হঠাৎই একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে মাথায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। পরে মরদেহ নেওয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আবুল কালামের মৃত্যুর খবর শুনে স্ত্রী আইরিন ও আত্মীয়স্বজনরা ওই হাসপাতালে পৌঁছালে মুহূর্তেই তাদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

স্বামীকে হারানোর বেদনায় আইরিন আক্তার প্রিয়া ছেলে আব্দুল্লাহকে কোলে নিয়ে আহাজারি করে বলেন, ‘আমার এই চাঁদকে কে দেখবে? আমার চাঁদগুলোর কী হবে? আব্দুল্লাহ ও সুরাইয়া (দুই সন্তান) আর বাবার সঙ্গে খেলতে পারবে না। আমার চাঁদগুলো কাকে বাবা বলে ডাকবে?’

সদ্যই স্বামীহারা এ নারী বলেন, ‘প্রতিদিন আমি তাকে বিদায় দিতে দরজায় আসি। আজ আমি তাকে বিদায় দিতে আসিনি, দরজাও আটকাইনি। তার জন্য আমার দরজা খুলেই রেখেছিলাম। গাভীর দুধ এনে ফ্রিজে রাখতে গিয়েছিলাম। আমি আবুল কালামকে বিদায় দিতে পারিনি, শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি। আমার বাচ্চাদের কে দেখবে? আমার চাঁদগুলোকে কে দেখবে? আমার চাঁদগুলোর কী হবে? আমার আর কিছুই রইল না—সব শেষ হয়ে গেছে। আর কোনো দিন আসবে না, আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরবে না। কাকে বাবা বলে ডাকবে আমার সন্তানরা?’

প্রিয়া আরও বলেন, ‘আবুল কালাম খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? আমার ছেলেমেয়ে কাকে বাবা বলে ডাকবে?’—কথাগুলো বলতে বলতে চিৎকার করে কাঁদছিলেন প্রিয়া।

নিহত আবুল কালামের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ইশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদারের ছেলে তিনি। নারায়ণগঞ্জের জলকাঠি এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার ছেলে আব্দুল্লাহর বয়স পাঁচ বছর এবং মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের বয়স তিন বছর।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে আবুল কালামের মরদেহ তার শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার আত্মীয়স্বজনরা শেষবারের মতো দেখার পর মরদেহ শরীয়তপুরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।

নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি চোকদার বলেন, ‘আবুল কালাম খুব ভদ্র মানুষ ছিলেন। কালামের এ অনাকাঙ্খিত মৃত্যু আমাদের জন্য বেদনার। সরকারের অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেল। এখন তার পরিবারে দায় দায়িত্ব কে নেবে?’

নিহতের মেজ ভাবি আছমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সর্বশেষ দুপুর ১২টার দিকে আবুল কালামের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছে। ও বলেছিল দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসবে। আমাকে ইলিশ মাছ কিনে রাখতে বলেছিল। আমার ভাই আর এলো না।’

এক বছরের ব্যবধানে ঢাকার মেট্রোরেলে একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল। অনেকের কৌতূহল এখন বিয়ারিং প্যাড নিয়ে। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি, তবে ট্রেন চলাচল ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল; কিন্তু তার ফল প্রকাশ পায়নি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে