রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০৫:০৮

ইলিশ নিয়ে বড় সুখবর

ইলিশ নিয়ে বড় সুখবর

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : মা ইলিশ রক্ষার জন্য আরোপিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর ও বাগেরহাটসহ উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার জেলে ইলিশ শিকারে নামার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। পদ্মা ও মেঘনা নদীতে মাছ ধরার জন্য তারা ইতোমধ্যে নৌকা, ট্রলার ও জাল মেরামত শেষ করেছেন।

মৎস্য কর্মকর্তারা আশা করছেন, টানা ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এবার ইলিশের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে পারে।

 ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছরের মতো এবারও ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত বিভিন্ন এলাকা ও বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমায় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ ছিল।

এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচালিত দুই শতাধিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক জেলেকে জেল ও জরিমানা করা হয়। তবে অভিযানের সময় অনেক জেলে সরকারের বরাদ্দ করা চাল পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
শনিবার মধ্যরাত পেরোলেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। তাই পদ্মা ও মেঘনার উত্তরের ষাটনল থেকে দক্ষিণের চরভৈরবী পর্যন্ত নদীপাড়ে এখন জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন জাল-নৌকা মেরামতে। নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও জাল ফেলতে প্রস্তুত তারা। তবে কষ্ট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে জেলেদের মনে।

 চাঁদপুরের জেলেরা জানান, পদ্মা ও মেঘনা তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস। এই দুই নদীর মাছেই চলে তাদের সংসার। কিন্তু আগের মতো এখন আর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ তেমন পাওয়া যায় না। এতে সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে তাদের ধারদেনা বেড়েছে। তারপরও নতুন আশায় তারা আবার নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
 
এদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবারের অভয়াশ্রম কর্মসূচি অনেক সফল হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলেদের বড় একটি অংশ সরকারকে সহযোগিতা করেছে। তবে কিছু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
 
তিনি আরও জানান, অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনা ও নৌ বাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ এবং মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা টানা ২২ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
অন্যদিকে ইলিশ গবেষক ও দেশের বিশিষ্ট মৎস্যবিজ্ঞানী ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ডিম ছাড়ার পর এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো জাটকা নিধন বন্ধ করা। এটি সংরক্ষণ করা গেলে ইলিশের প্রাচুর্যতা বজায় থাকবে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে। অন্যথায় জাটকা ধরা চলতে থাকলে ইলিশ উৎপাদন কমে যাবে, বাজারে চাহিদার তুলনায় দাম বেড়ে ভোক্তা পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
 
পটুয়াখালীর জেলেরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত ইলিশ পেলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। তবে সরকারি বরাদ্দের ভিজিএফ চাল বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রকৃত জেলেদের তালিকা হালনাগাদের দাবি জানিয়েছেন তারা।

 পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু অসাধু জেলের কর্মকাণ্ড ছাড়া সামগ্রিকভাবে নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। এ বছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
 
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, জেলায় এক লাখেরও বেশি জেলে রয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ হাজারের বেশি জেলে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ২৫ কেজি করে ভিজিএফ চাল পেয়েছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে