এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। সেই পরিবার থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ বেছে নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছাত্র রাজনীতির মাঠে নামেন তিনি। পরিবারের রাজনৈতিক আদর্শের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন আপনজনদের কাছ থেকে।
সেই রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এখন লড়বেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ২৩৭ আসনের প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেন, যেখানে শ্রাবণের নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রায় একযুগ পর গত ২০ সেপ্টেম্বর নিজভূমি কেশবপুরে ফিরে আসেন শ্রাবণ। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনায় সেদিন তিনি ঘোষণা দেন—আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অংশ নেবেন।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শ্রাবণ বলেন, “আমার পরিবার ভিন্ন মতাদর্শের হলেও নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে না। দলে মনোনয়ন নিয়ে যে দ্বন্দ্ব আছে, সবাইকে নিয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করে তারেক রহমানকে এ আসনটি উপহার দিতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নির্বাচিত হলে কেশবপুরের বড় সমস্যা—জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করব। কেশবপুরবাসীর মন জয়ে কাজ করব।”
যে কারণে পরিবার ত্যাগ করেন শ্রাবণ:
শ্রাবণের গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামে। বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি; তিনি কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। বড় ভাই মুস্তাফিজুল ইসলাম ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কৃত। অপর ভাই মোজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক, আর ছোট ভাই আজাহারুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।
অর্থাৎ, পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই পরিবারেই ভিন্ন আদর্শে বেড়ে ওঠেন রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলে ছাত্র হিসেবে থাকাকালীন তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন এবং ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে উঠে আসেন। ২০২২ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি হন। ২০২৩ সালের আগস্টে ‘অসুস্থতার’ কারণ দেখিয়ে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও, দুই মাস পরই বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়।
বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই পরিবার থেকে দূরে সরে যান শ্রাবণ। দীর্ঘ এক যুগ পর ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কেশবপুরে ফিরে এলেও তিনি নিজ বাড়িতে যাননি, এমনকি পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগও রাখেননি।
সেদিন কেশবপুরে পৌঁছালে হাজারো নেতাকর্মী তাকে ফুল ও মিছিলের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানান। প্রায় দেড় হাজার মোটরসাইকেল ও শতাধিক মাইক্রোবাসের বিশাল বহরে তিনি লিফলেট বিতরণ করে বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচির প্রচারণা চালান।
রাজনৈতিক আদর্শে আপসহীন এই তরুণ নেতা এখন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামছেন—যা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রার নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।