শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:০৬:৫৭

জামায়াত নেতার ‘নো হাংকি পাংকি’ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা মাসুদ কামালের

জামায়াত নেতার ‘নো হাংকি পাংকি’ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা মাসুদ কামালের

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সিনিয়র সাংবাদিদ মাসুদ কামাল বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী এখন রাজনীতির মাঠ বেশ গরম করে তুলেছে। তারা পাঁচ দফা দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলনে নামছে।  

তাদের দাবিগুলোর চূড়ান্ত বাস্তবায়নের জন্য দলটি ১১ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে—যদি ১১ তারিখের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি না মানা হয়, তাহলে ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে। এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার।

আর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে, তাহলে আঙুল বাঁকা করব। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন।

নো হাংকি পাংকি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।’ সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেছেন।

মাসুদ কামাল বলেন, আমি স্বীকার করছি—গত কিছু দিনে জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু বিষয়টা সাধারণ মানুষের চেয়ে জামায়াতের নেতারা যেন একটু বাড়িয়ে অনুভব করছেন।

আর এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণেই তাদের কথাবার্তায় কোনো ভারসাম্য থাকছে না। ঢাকার চিত্র পাল্টে দেওয়ার যে হুমকি তারা দিচ্ছেন, সেটা একেবারেই লাগামছাড়া বক্তব্য। আমরা তো এমন জামায়াত চাই না।

মাসুদ কামাল আরো বলেন, আপনারা কাকে হুমকি দিচ্ছেন? সরকারকেই তো দিচ্ছেন, তাই না? অথচ সরকারের সঙ্গে তো আপনাদের সম্পর্ক বেশ ভালো! আমেরিকায় তো একসঙ্গে গিয়েছেন, একই প্লেনে ২০ ঘণ্টা ভ্রমণ করেছেন—এটা তো সবাই জানে। অনেকেই তো বলে সরকার আসলে আপনারাই চালাচ্ছেন! তাহলে এই হুমকি-ধমকি কার জন্য? কাকে দেখাচ্ছেন? এসব নাটক করবেন না, প্লিজ।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, জনগণকে জামায়াতের পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়া দরকার। তাদের এক নম্বর দাবি আসলে দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য আদেশ জারি করা, দ্বিতীয়ত, ওই আদেশের ওপর চলতি মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা। দুই. আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। তিন. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। চার. ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং পাঁচ. স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে মাসুদ কামাল বলেন, আপনারা পাঁচটা দাবি তুলেছেন, আর বলছেন—দাবি পূরণ না হলে দেশ উল্টে দেবেন! আমি মনে করি, এই দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে। তবে প্রথমেই আসি মূল দাবিতে—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে, এটাই এখন আপনাদের প্রধান দাবি। কিন্তু সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের এই ধরনের কোনো আদেশ জারি করার অধিকার নেই। যারা আইন বোঝেন, তারা ভালো করেই জানেন—উপদেষ্টা পরিষদের কোনো আইন জারি, আইন প্রণয়ন বা অধ্যাদেশ জারি করার এখতিয়ার নেই। তারা শুধু রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দিতে পারেন, আর এ কারণেই তাদের নাম ‘উপদেষ্টা’। রাষ্ট্রপতিই তাদের নিয়োগ দিয়েছেন, এবং তারা সেইভাবেই শপথ নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, যার আইনগত ক্ষমতাই নেই, তিনি কীভাবে এমন আদেশ জারি করবেন? এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধানবিরোধী দাবি। আর যদি আপনারা বলেন— ‘আমরা কোনো আইন মানি না, আমাদের কথাই আইন’ তাহলে তো সেটা ভিন্ন ব্যাপার। সেটা হতে পারে একটি সামরিক শাসনের মতো পরিস্থিতি, যেমন অতীতে এরশাদ করেছিলেন।সংবিধান স্থগিত করে নিজেদের আদেশকে আইন হিসেবে কার্যকর করেছিলেন। 

মাসুদ কামাল বলেন, আপনারা নিজেরাই বলেছেন, বর্তমান সরকার একটি সাংবিধানিক সরকার। যদি তা-ই হয়, তাহলে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি সংবিধান অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য।

তিনি বলেন, এখন আসি দ্বিতীয় দাবিতে— চলতি মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে তো গণভোটের কোনো ব্যবস্থা নেই! তাহলে সেটা করবেন কীভাবে? সারা পৃথিবীতেই গণভোট হয় সংসদের কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। সংসদে আলোচনা হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারপর জনগণের কাছে তা সমর্থন যাচাইয়ের জন্য তোলা হয়। কিন্তু এখানে তো সংসদই নাই! তাহলে কোন ভিত্তিতে গণভোট করবেন?

তিনি আরো বলেন, আপনারা যে ‘গণভোট’ বলতে ৪৮টি বিষয়ের ওপর ভোট চাচ্ছেন— এটা তো একটা রেফারেন্ডাম নয়, একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি। এখন বলছেন—‘রাজপথ গরম করবেন, ঢাকার চেহারা পাল্টে দেবেন, আঙুল বাঁকা করবেন’—এসব কথা রাজনৈতিক না বরং একধরনের হুমকি। আসলে আপনাদের পুরো বক্তব্যটাই হুমকি-ধমকিতে ভরা মনে হচ্ছে।

মাসুদ কামাল বলেন, আমরা এটা চাই না, ভাই। আমরা চাই—নির্বাচন হোক, জনগণ যাকে চায় সেই দল ক্ষমতায় আসুক, তারা দেশ চালাক। কিন্তু এই ধরনের হুমকি, পাল্টা হুমকির রাজনীতি—এটা দেশ বা গণতন্ত্র, কোনো কিছুরই জন্য ভালো নয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে