এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বরিশালে বাসভাড়া নিয়ে তর্ক–বিতর্ক থেকে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত তা পরিণত হয়েছে ব্যাপক সহিংসতায়। নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে শনিবার সন্ধ্যায় সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থী ও বাসশ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনার জেরে শতাধিক বাস, একাধিক কাউন্টার ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। নুর পরিবহনের একটি বাসে আগুনও দেওয়া হয়। রাত ৯টার পর সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই ঘটনার পর আজ রবিবার সকাল থেকে বরিশাল–ঢাকা রুটসহ নথুল্লাবাদ থেকে সকল অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাউন্টারে হামলা, কম্পিউটার লুটপাট ও অসংখ্য বাসে ভাঙচুরের কারণে স্বাভাবিক পরিবহনসেবা কবে চালু হবে, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির পর শতাধিক শিক্ষার্থী টার্মিনালে অবস্থান থাকা বাসে হামলা চালান। একপর্যায়ে শ্রমিকরাও গোল চত্বরে জড়ো হয়ে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন। এ সময় বরগুনা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরমুখী বহু যানবাহন আটকা পড়ে।
আল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তারা ড্রাইভারকে মেরেছে। আমাদের শ্রমিকও তো তখন মারবে। এরপর আরও লোক এসে বাস ভাঙচুর করেছে।
বিএম কলেজের শিক্ষার্থী রাজুর দাবি, আমাদের এক ছাত্রকে হেনস্তা করা হয়। খবর পেয়ে আমরা গেলে শ্রমিকরা উল্টো হুমকি–ধমকি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে।
বিএমপি এয়ারপোর্ট থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম বলেন, ভাড়া নিয়ে তর্কের বিষয়টি মীমাংসার পথে ছিল। কিন্তু উত্তেজনাকর একটি মন্তব্যের কারণে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।
প্রথমদিকে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে তা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, সংঘর্ষে কেউ হতাহত হয়নি। তবে কতটি বাস ভাঙচুর হয়েছে, তার সঠিক হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, হাফ ভাড়া কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে। পরে তার বন্ধুরাও হামলার শিকার হয়। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশারেফ হোসেন বলেন, টার্মিনালের সব বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। কাউন্টার ভাঙা, টাকা–পয়সা লুট—সবই হয়েছে। হাজারের মতো লোক ছিল। ছাত্র নাকি বহিরাগত, আমরা নিশ্চিত নই। ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে আজ রবিবার বাস চালানো সম্ভব হয়নি।
সহিংসতার কারণে নগরের সবচেয়ে বড় পরিবহন কেন্দ্রটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও বাস মেরামতের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।