এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানীসহ সারাদেশ। নরসিংদীর মাধবদী থেকে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটি শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭।
ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশে দুই শিশুসহ ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন যার মধ্যে শুধু নরসিংদীতেই মারা গেছেন ৫ জন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো কয়েকশ মানুষ।
এদিন সকালে পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকার একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন নিহত হন। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন জানান, নিহতদের সবাই ওই সময় ভবনটির নিচের রাস্তায় অবস্থান করছিলেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিটফোর্ড) ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম, হাজী আব্দুর রহিম (৪৭) ও মেহরাব হোসেন রিমন (১২)।
এদিকে, রাজধানীর মুগদার মদিনাবাগে নির্মিয়মাণ ভবনের রেলিং ধসে মো. মাকসুদ (৫০) নামের এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে ডোম রামু জানান, সকালে পুলিশ এসে একজনের মরদেহ রেখে যায়। তারা পরিচয় নিশ্চিত করেনি। তবে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে তার মৃত্যু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামের ১০ মাসের একটি শিশু নিহত হয়েছে। এ সময় শিশুটির মা কুলসুম বেগমসহ (৩০) দুজন আহত হন।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতের নাম সুজিৎ দাস (৩৮)। ভূমিকম্পের সময় উপজেলার চানখোলা এলাকার সুবুদের বাড়িতে গাছ কাটতে যান সুজিৎ। তিনি গাছের ওপর থাকার সময় ভূমিকম্প হয়। তাতে গাছ থেক পড়ে যান তিনি।
নিহত সুজিত নাগরী ইউনিয়নের আড়াগাও সুখ মোহনের ছেলে। গাছ থেকে পড়ে গেলে স্থানীয়রা তাকে উদ্দার করে কালীগঞ্জ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এদিকে নরসিংদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলাজুড়ে ভূমিকম্পে এক শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। নিহতরা হলেন শিবপুর উপজেলার আজকিতলা গ্রামের ফুরকান মিয়া (৪২), সদর উপজেলার গাবতলি এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৭), তার শিশু সন্তান ওমর মিয়া (১২) ও পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের কাজম আলী (৭৫)।
মাটির ঘরের দেয়াল ধসে মারা যান বৃদ্ধ কাজম আলী ভূইয়া। আর ভূমিকম্পের আকস্মিকতায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান একই উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের নাসির উদ্দিন। পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
নিহতদের মধ্যে ফুরকান মিয়া (৪২) ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হলে তাকে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে রেফার করা হলে পথে তার মৃত্যু হয়। শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ফারজানা ইয়াছমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নরসিংদী সিভিল সার্জন সৈয়দ আমিরুল হক জানান, আহতের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৫৭ জন এবং জেলা হাসপাতালে ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পে ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুরে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে ভূমিকম্পে ভয়ে হুড়োহুড়ি করে বহুতল ভবন থেকে নিচে নামতে গিয়ে পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের ডেনিম্যাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবনের ছাদ, ছাদের পলেস্তার, দেয়াল ইত্যাদি ধসে ও হুড়োহুড়িতে অনেকে আহত হয়েছেন।