এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উপর্যুপরি মাঝারি ও মৃদু মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে দেশের কোন এলাকাগুলো অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মানচিত্রের ‘নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ’ বা জোন-৩-এর আওতাভুক্ত।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) নরসিংদী ছিল ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল, যা দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় ফল্ট লাইনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্লেট বাউন্ডারি ও সক্রিয় ফল্ট লাইন থেকে দূরে থাকা জেলাগুলো তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় আবহাওয়া অধিদফতরের মানচিত্র অনুযায়ী বাংলাদেশকে মূলত তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে: জোন-১ (উচ্চঝুঁকি), জোন-২ (মাঝারি ঝুঁকি) এবং জোন-৩ (নিম্ন ঝুঁকি)।
সাম্প্রতিক গবেষণা এবং ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত।
নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ (জোন-৩) এলাকার জেলাসমূহ:
খুলনা বিভাগ: খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর।
বরিশাল বিভাগ: বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি।
রাজশাহী বিভাগের পশ্চিমাংশ: (কিছু অংশ জোন-২-এর হলেও পশ্চিমাংশ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলগুলো মূল টেকটোনিক প্লেট বাউন্ডারি (যেমন: ডাউকি ফল্ট, মধুপুর ফল্ট বা মিয়ানমার ফল্ট লাইন) থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকায় সরাসরি বড় ধরনের কম্পন সৃষ্টির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় না।
উচ্চ এবং মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা
অন্যদিকে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল প্রধানত উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে:
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (জোন-১): সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, এবং চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকার কিছু অংশ (রাঙামাটি, বান্দরবান)।
মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ (জোন-২): ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বগুড়া এবং রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ এলাকা।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল
বাংলাদেশের চারপাশে ভূমিকম্পের পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আছে। এর একটিকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি-১, যেটা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত। এ ছাড়া প্লেট বাউন্ডারি-২ নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে। এগুলোই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।
যদিও নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলের জেলাগুলো বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন যে, দুর্বল অবকাঠামো বা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হলে রিখটার স্কেলে কম মাত্রার কম্পনেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।